রমজানের ৩০ রোজার ৩০ ফজিলত সম্পর্কে ইদানিং যে হাদিস গুলো দেখা যাচ্ছে তা সম্পূর্নই জাল এবং বানোয়াট,প্রথমে আমিও বিশ্বাস করে পোস্ট করেছিলাম এমন তিনটা জাল হাদিস,পরে সিউর হয়ে তা ডিলেট করে দিয়েছি!
কারন রমজানে আপনি কোন ইবাদাত করলে তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে বৃদ্ধি করে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়ার হাদিস অাছে। কিন্তু রোজা রাখলে তার কি পরিমান সওয়াব বা কেমন সওয়াব দেয়া হবে তা কোথাও উল্লেখ নেই,কোরআন এবং হাদিস কোথাও,কারন মহান আল্লাহ বলেন রোজার সওয়াব বা তার পুরষ্কার তিনি নিজেই দিবেন!
যেখানে মহান অাল্লাহ নিজেই বলেছেন রোযার সওয়াব তিনি নিজেই দিবেন সেখানে এ ধরনের হাদিসগুলো অাসলো কোত্তেকে? এবং এখন পর্যন্ত কেও তার সহীহ দলিল পেশ করতে পারেন নাই এ জাল হাদিস গুলোর ব্যাপারে!
নিচে কয়েকটা রোজার সওয়াব গুলো একটু খেয়াল করলে অারো ক্লিয়ার হবেনঃ-
৬ষ্ট রোজা, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১৭তম, ২০তম, ২৪তম, ২৫তম, ২৮তম, ২৯তম, ৩০তম
১ম রোজাতেই রোজাদারকে নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ করে দেয়া হয়, তাইলে বাকি ২৯টা না রাখলেই তো হয়"৯ম তম রোজাতে নবী রাসুলদের সাথে দাড়িয়ে ইবাদাতের সমান সওয়াব দেয়া হয়!
আবার ১৭তম রোজার ফজিলতটা একটু খেয়াল করেন"একদিনের জন্য নবীগনের সওয়াব প্রধান করা হয়"মহান আল্লাহ দুনিয়াতে ১লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর পাঠিয়েছেন,অর্থাৎ আল্লাহর নবী,এখন এ ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবীর একদিনের সওয়াব যদি আপনার আমল নামায় দেয়া হয় তাহলে তো আপনার আমলনামাটা নবীদের আমলনামার চেয়েও ভারী হয়ে যাবে!
৩০তম রোজার ফজিলতটাও একটু খেয়াল করেন"পুরো রমজানের ফজিলত দিগুন" অর্থাৎ সমস্ত নবীগনের যে একদিনের সওয়াবটা দেয়া হবে সেটাও দিগুন,তারমানে দুইদিনের সওয়াব,একটু চিন্তা করে দেখেন তো,৩০টা রোজার যে ৩০ টা ফজিলত বর্ননা করা হয়েছে ৩০ তম রোজাতে গিয়ে তার সবকিছুই দিগুন করে দেয়া হবে,যদিও বেশির ভাগ সময় রোজা ২৯ টাই হয়ে থাকে,যেখানে রোজা ২৯ টা হবে কি ৩০টা হবে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেও জানেন না, সেখানে ৩০তম রোজার ফজিলত কোত্তেকে আসলো? ৩০তম রোজার ফজিলত দেয়া আছে মানে তো রোজা প্রত্যেকবার ৩০টাই হওয়ার কথা আর ফজিলত গুলো দেখলেই বোঝা যায় যে এসব নিজের মনমত বা খেয়াল খুশি মত লিখে দিয়েছে,কোন ধারাবাহিকতা নাই এ ফজিলতের!
আবার ৩০ তম রোজা না অাসা মানেই তো পুরো রমজানের দিগুন ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া!
আর এরকম হলেতো আপনি শুধু মাত্র ১৬ কিংবা ১৭ অথবা ২৪তম রোজাটা রেখে বাকি সব ভেঙ্গে ফেলতে পারেন,কারন ১৬তম রমজানে রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন,শুধু মাত্র ১৭তম রোজার সওয়াব দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসে চলে যেতে পারবেন,আবার ২৪তম রোজাতে যে কোন ২৪টা দোয়া আল্লাহ কবুল করে নিবেন,তাহলে তো অাপনি ২৪ তম রোজাটা রেখে প্রথম থেকে ২৪টা রোজার সব ফজিলতের জন্য দোয়া করলেই হয়ে যাবে!
তারপরেও যদি কারো কাছে সন্দেহ লেগে থাকে তাহলে অাপনার পরিচিত কোন ভালো মুফতি থেকে ক্লিয়ার হয়ে নিবেন,ধন্যবাদ!
অাপনাদের_কারো_কাছে_যদি_এই_হাদিসগুলোর_সঠিক_তথ্য_থেকে_থাকে_তাহলে_জানাবেন
নিচে ৩০রোজার ৩০ ফজিলতের যে জাল হাদিস তা দেয়া হলোঃ-
রমজানের ৩০ দিনের ৩০ফজিলত,,
#১ম রমজানে = রোজাদারকে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়!
#২য় রমজানে = রোজাদারের মা -বাবাকে মাফ করে দেওয়া হয়!
#৩য় রমজানে = একজন ফেরেশতা আবারও রোজাদারের ক্ষমার ঘোষনা দেয়!
#৪র্থ রমজানে = রোজাদারকে আসমানী বড় বড় চার কিতাবের বর্ণ সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়!
#৫ম রমজানে= মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে নামাজ আদায়ের সাওয়াব দেওয়া হয়!
#৬ষ্ঠ রমজানে= ফেরেশতাদের সাথে ৭ম আকাশে অবস্থিত বাইতুল মামূর তাওয়াফের সাওয়াব প্রদান করা হয়!
#৭ম রমজানে= ফিরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আঃ এর পক্ষে সহযোগিতা করার সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়!
#৮ম রমজানে =রোজাদারের উপর হযরত ইবরাহীম আঃ এর মতো রহমত- বর্ষিত হয়!
#৯ম রমজানে= নবী-রাসূলদের সাথে দাড়িয়ে ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হয়!
#১০ম রমজানে= রোজাদারকে উভয় জাহানের কল্যাণ দান করা হয়!
#১১তম রমজানে=রোজাদারের মৃত্যু নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ নিশ্চিত হয়!
#১২তম রমজানে= হাশরের ময়দানে রোজাদারের চেহারা পূর্ণিমা চাদের মতো উজ্জল করা হবে!
#১৩তম রমজানে=হাশরের ময়দানের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ করা হবে!
#১৪তম রমজানে= হাশরের ময়দানে হিসাব- নিকাশ সহজ করা হবে!
#১৫তম রমজানে = সমস্ত ফিরিস্তারা রোজাদারের জন্য দোয়া করে!
#১৬তম রমজানে= আল্লাহপাক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেন!
#১৭তম রমজানে= একদিনের জন্য নবীগনের সমান সাওয়াব দেওয়া হবে!
#১৮তম রমজানে = রোজাদার এবং তার মা-বাবার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়!
#১৯তম রমজানে= পৃথিবীর সকল পাথর-কংকর টিলা- টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে!
#২০তম রমজানে =আল্লাহরপথে জীবন দানকারী শহীদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়!
#২১তম রমজানে = রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি উজ্জল প্রাসাদ নির্মান করা হয়!
#২২তম রমজানে= হাশরের ময়দানের সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করা হয়!
#২৩তম রমজানে= জান্নাতে রোজাদারের জন্য একটি শহর নির্মান করা হয়!
#২৪তম রমজানে = রোজাদারের যে কোন 24টি দোয়া কবুল করা হয়!
#২৫তম রমজানে= কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়!
#২৬তম রমজানে =40 বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়!
#২৭তম রমজানে= চোখের পলকে পুলসিরাত পার করে দেওয়া হয়!
#২৮তম রমজানে= জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুন করা হয়!
#২৯তম রমজানে= এক হাজার কবুল হজ্জের সাওয়াব প্রদান করা হয়!
#৩০তম রমজানে= পুরা রমজানের ফজিলত দ্বিগুণ।