৩৬ জুলাই: বাংলাদেশে এক নতুন অধ্যায়
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে "৩৬ জুলাই" শব্দবন্ধটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টকে বোঝায়। এটি এমন এক দিন, যা ইতিহাসের বাঁকে এক নতুন মোড় সৃষ্টি করে।
গণ-অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গঠিত এই দিনটি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ জুন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ জুলাই এই আন্দোলন রূপ নেয় এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষে, যা ইতিহাসে "জুলাই গণহত্যা" নামে পরিচিতি লাভ করে। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও, আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। তাদের দাবি ছিল স্পষ্ট— তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস গণনা অব্যাহত রাখবেন। এইভাবে ১ আগস্ট থেকে ৩২ জুলাই হিসেবে দিন গণনা করা শুরু হয়, যা পরে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত গড়ায়।
৪ আগস্ট, অর্থাৎ ৩৫ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় এবং ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) তারা "মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা করে। জনগণের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক জনসমর্থনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ত্যাগ করেন। এই ঘটনাকে আন্দোলনকারীরা "দ্বিতীয় স্বাধীনতা" বলে আখ্যায়িত করেন এবং দিনটিকে ৩৬ জুলাই হিসেবে স্মরণ করেন।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ৩৬ জুলাই
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরদিন, ৬ আগস্ট, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে "৩৬ জুলাই" নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। দৈনিক আজকের পত্রিকা তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় "জুলাই গণহত্যা" শিরোনামে আন্দোলনের সময়রেখা তুলে ধরে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আকবর আলী প্রমুখ বিভিন্ন বক্তব্যে "৩৬ জুলাই" শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন।
এছাড়াও, দেশব্যাপী দেয়ালচিত্র এবং গ্রাফিতি আঁকা হতে থাকে, যেখানে ৩৬ জুলাইয়ের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে ঢাকার ঝিগাতলার ডেসকো ভবনের দেয়ালে আঁকা জুলাইয়ের ৩৬ দিনের দিনপঞ্জির গ্রাফিতিটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও অন্যান্য এলাকায়ও ৩৬শে জুলাই সম্পর্কিত গ্রাফিতি দেখা যায়।
উপসংহার
৩৬ জুলাই শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি এক প্রতীক—এক সংগ্রামের, এক বিজয়ের। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জনতার ঐক্য কীভাবে ইতিহাস গড়তে পারে। ৩৬ জুলাই কেবল অতীতের এক দিন নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য এক অনুপ্রেরণা, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ন্যায়বিচারের জয়কে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।