শহীদ আবু সাঈদ নিয়ে রচনা।আবু সাঈদ নিয়ে রচনা

আবু সাঈদ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ


ভূমিকা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে উঠেছে আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী ছাত্র, যিনি ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন

আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম। তিনি ছিলেন ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। এরপর তিনি খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০ সালে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভূমিকা

আবু সাঈদ ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী কর্মী ছিলেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং আন্দোলনের স্বার্থে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় ছিলেন। ১৫ই জুলাই তিনি ফেসবুকে অধ্যাপক শামসুজ্জোহার স্মরণে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

শহীদ হওয়া

১৬ই জুলাই ২০২৪, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের মধ্যেও আবু সাঈদ প্রতিবাদী অবস্থান নেন। তিনি পুলিশের দিকে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তার এই আত্মত্যাগ আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে।

প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী ঘটনা

আবু সাঈদের মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ জনগণ পুলিশের এই আচরণের নিন্দা জানায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের দাবি করেন। ভারতীয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও আবু সাঈদের ছবি পোস্ট করে শোক প্রকাশ করেন।

আন্দোলনকারীরা রংপুরের পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের নামকরণ করেন ‘শহীদ আবু সাঈদ গেইট’। সরকার ২৬শে জুলাই আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

উপসংহার

আবু সাঈদ শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি প্রতীক—যে ছাত্র অধিকারের জন্য লড়াই করে নিজের জীবন দিয়েছেন। তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাকে স্মরণ করে নতুন প্রজন্ম ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে অনুপ্রাণিত হবে।

Post a Comment