আবু সাঈদ নিয়ে কবিতা।শহীদ আবু সাঈদ নিয়ে কবিতা


শহীদ আবু সাঈদ ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।

তিনি ২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মুহূর্তে তার দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর সাধারণ মানুষ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, যা পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তার আত্মত্যাগ নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মৃত্যুর পর প্রকাশিত স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলে তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেন। তার এই আত্মত্যাগ ও মেধা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

আবু সাঈদ 

(উৎসর্গ: চব্বিশের প্রথম মেধা শহিদ আবু সাঈদ ভাইকে।)


বুকের ভেতরে অসীম সাহস 

চোখে নেই কোন ভয়,

অটল চরণ প্রসারিত বাহু 

যেন তুমি হিমালয়।

তোমার বক্ষ চীনের প্রাচীর 

রুখে দিবে সব ঝড়,

কাঁপিয়ে তুলবে স্বৈরাচারীর

পঙ্কিল অন্তর।

বর্গি বুলেটে মর নি হে ভাই,

অমর তুমি তো বীর,

বৃথা যাবে নাকো তোমার এ ত্যাগ

তোমার খুন-রুধির।

তুমি বরকত তুমিই রফিক 

নতুন এ যমানার,

হয়তো কখনো উঠবে না গড়ে

তোমায় নিয়ে মিনার।

হয়তো কখনো লিখবে না কেউ

আরেক শ্রাবণ গান,

তবুও লক্ষ কোটি প্রাণে জানি

রেখে যাবে স্থান।

তোমার কৃষ্ণ গেঞ্জিতে ভাসে

মুক্তির অবয়ব,

তুমি ছেষট্টি উনসত্তর 

বায়ান্ন বিপ্লব।

সাঈদ! সাঈদ! ইতিহাস তুমি

তুমি বিদ্রোহী রূপ,

তোমার প্রয়াণে রবো না আমরা

নীরব ও নিশ্চুপ।

সাম্য সমাজ উদিত সূর্য

হৃদয়ে স্বপ্ন নিয়ে,

আমরা এগোবো সম্মুখপানে 

দুর্বার নির্ভয়ে।

আমাদের নেই উর্দির ভয়

আমরা তরুণ প্রাণ,

গরম রক্ত দীপ্ত আবীরে 

আজাদির জয়গান!

(আপনি এক গর্বিত ইতিহাস। আমরা আপনাকে ভুলতে দিবো না ইনশাআল্লাহ!)

লেখক: খালিদ হাসান


বীর সাঈদ
মোঃ আলাউদ্দীন ভুইয়া

সাঈদ ছিল গুণী, এই পুলিশ যেন খুনি,

টের পাইনি সাঈদ বাবা।

সরলতার সুজোগে, দানবের মত হুজুগে,

তাঁজা বুকে মারলি থাবা।

হে ঘাতক চিনলে না-সাইদ কে,

অন্যরা কারা।

আকাশ ছুঁয়ে গুলি মেরে দিতে

করে কারা!

প্রশ্ন; বল, বল, বল ওরে ঘাতকের দল,

শত শত সংসার করে দিলে-অচল।

বুঝে, না বুঝে চালিয়েছ-বন্ধুকের নল।

আমাদের দেশ, করে দিলে শেষ,

অন্ধকারে তল।

এখন বুঝি, হত্যা ছিল তোমাদের পুঁজি,

তোমরা তো হার মানিয়েছ ব্রিটিশের যোগ।

তোমরা তো হার মানিয়েছ ক্যান্সার রোগ।

তোমরা তো হার মানিয়েছ পাকের ডান্ডা।

সব শেষে পেলে শুধু ঘোড়ার আন্ডা।

হে; প্রভু তোমার কাছে ফরিয়াদ,

না, ছিল ছাত্র জনতার অপরাধ,

শুধু হকের উপর ছিল প্রতিবাদ,

ওরে তার পাপের ছিল এত ভার।

হেলমেট খুলে গেল ইশারায় বিধাতার,

মুহুর্তে ভেসে গেল দানবের ছায়া,

ছেলের মত দেখেও, ঘাতকের হল না যে মায়া,

ঘাতক তোমার নামের মাঝে করি শুধু-বমি,

দোয়া, সাঈদ না ফেরার দেশে সুখে থাক তুমি।

কিছু না বোঝার আগে বুকে নিলে-তীর।

আজ তুমি হয়ে উঠেছ বাংলার বীর।


সবাই তখন ‘আবু সাঈদ’
ডা. মোহাম্মদ এজাজ হোসেন

আবু সাঈদ’কে নিয়ে লেখতে গেলে

যুৎসই শব্দ খুঁজে পাই না

খুঁজে পেলেও সাজাতে পারি না!

সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি কাটাকুটি

পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা আঁকিবুঁকি কাটাকুটি!

সাদা কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকি

সাদা কাগজ ফুঁড়ে উঠে আসে আবু সাঈদ!

কী অসীম সাহসী যুবক

দুই হাত প্রসারিত করে বন্দুকের সামনে দাঁড়ানো!

হয়তো বিশ্বাস ছিল গুলি করবে না

প্রথম গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে আবারও উঠে দাঁড়ানো!!

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকানো না...

সবাই জেগে উঠলো,

সবাই তখন সাহসী,

সবাই তখন ‘আবু সাঈদ’!

আমার বাপজান
ডা. মোহাম্মদ এজাজ হোসেন

শান্তশিষ্ট খোকা,

বাসায় না জানিয়েই মিছিলে

উত্তাল মিছিলের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।

নিথর নিস্তব্ধ খোকা,

কপালের মাঝখানে গুলির চিহ্ন

একটি মাত্র গুলি, কী নিখুঁত নিশানা!

কাফনে খাটিয়ায় খোকা,

মমতায় কপালে হাত বুলাচ্ছেন মা,

হাতে লাগছে কপাল থেকে চুঁয়ে পড়া রক্ত!

‘আহারে, আমার খোকা

এত্ত বড় হয়ে গেলি কবে!

পুরা খাটিয়ায় তো দেখি আমার বাপজান!’


টকটকে লাল
ডা. মোহাম্মদ এজাজ হোসেন


(মুগ্ধকে উৎসর্গ করে লেখা)

বর্ষায় ভিজছি আনমনে,

বর্শার মতো শরীরে বিঁধছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি!

চারপাশে এত পানি,

তবুও অপার মুগ্ধতায় শুধু কানে বাজছে,

‘পানি লাগবে কারো? পানি-পানি।’

বৃষ্টির পানির রং দেখি টকটকে লাল!!


শহীদ আবু সাঈদ নিয়ে কবিতা

মেধা শহীদ জাতীয় বীর আবু সাঈদ 
মুহাম্মাদ আসিফ মরতবা 


মে : মেঘ মুক্ত মহাকাশে মন মেলেছি

ধা : ধারাধারির ধার ধারিনি

শ : শতশত শতদলের শোর শুনে

হী : হীরাপান্না হীন্তাল হয়ে

দ  : দখলমুক্ত দেশ দিয়েছি


জা : জাগো জাগো জোয়ান জাগো

তী : তীরহারারা তাকিয়ে তব

ও : ওঠো ওঠো ওগো ওঠো, ওঠে ওড়পুষ্পও


বী : বীরশ্রেষ্ঠের বলা বুলি বারবার বলো

র : রক্তচক্ষু রুখতে রংপুরে রনরন রিরি রব রটলো


আ : আলো আনতে

বু : বুকে  বুলেট বিধলো


সা : সাহসীকতার সঙ্গে

ঈ : ঈশ্বরের ঈগল

দ : দরিয়াসম দিল দিলো।


প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ
শহীদুল্লাহ ফরায়জী


বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের দাবিতে 

মাথায় ও হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে 

বুলেটের সামনে দাঁড়ানো 

প্রাণ উৎসর্গকারী বীর-মহাবীর 

সময়ের সূর্যস্নাত সন্তান।


একজন নিরস্ত্র নাগরিক 

দু’হাত প্রসারিত ক’রে মাটিতে দণ্ডায়মান 

অথচ তাঁকে রাষ্ট্র ক্ষমা করেনি।

যেখানেই গুলি করেছে 

সেখানেই জাতীয় পতাকা।


বিবেক সুরক্ষা দিতে

উচ্চকিত হাতে পতাকা নিয়ে 

সূর্যের আলোতে গেঁথে দিয়েছিলে,

শাসকরা বুঝলো— 

অঘোষিত মৃত্যুদণ্ড ছাড়া 

আর প্রতিরোধ করা যাবে না।


এক আবু সাঈদ 

অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায্যতার পক্ষে 

লড়াই ছড়িয়ে দেবে আকাশে-বাতাসে,

লড়াই তুলে দেবে ছাত্রদের হাতে-হাতে 

পতাকা উড়িয়ে দেবে স্কুলে-স্কুলে, 

উঠোনে-উঠোনে, গাছের পাতায়-পাতায়।


যারা ভোট খেয়ে ফেলে

খেয়ে ফেলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ

মুক্তিযুদ্ধ আত্মসাৎ ক’রে ফেলে 

ব্যক্তিগত করে ফেলে রাষ্ট্রকে,

তারা আবু সাঈদকে বাঁচতে দিলো না।



মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর  

আবার মুক্তিযুদ্ধ,

আবার রক্ত ঝরানো-লড়াই!


আবার সন্তানের লাশ প’ড়ে আছে 

আবার মস্তক ছিন্ন 

আবার দেহ খন্ড-বিখন্ড 

আবার রাজপথ রক্তরঞ্জিত

আবার মায়ের আহাজারি 

আবার জন্ম নেবে আবু সাঈদ 

আবার জন্ম নেবে প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা,

যারা রাজপথে দাঁড়িয়ে 

মৃত্যুকে পরাজিত করবে,

বীরের রক্তে রক্তাক্ত পতাকা 

আবার উড়বে বৈষম্যহীন বাংলায়।


হে বীর,

জেনে রেখো—বীরের মৃত্যু নেই

আবার জন্ম নেবে তুমি বাংলার ঘরে ঘরে 

আবার পতাকা‌ নিয়ে

মিছিলে যাবে অনন্তকাল ।

Post a Comment