সন্ত্রাসবাদ কাকে বলে ।সন্ত্রাসবাদের কারণ কি কি ।সন্ত্রাসবাদের কারণ ও প্রতিকার

সন্ত্রাসবাদ কাকে বলে

সন্ত্রাসবাদ হল পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা আদর্শগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের একটি কৌশল।


এটি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসবাদের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, সাধারণভাবে এটি এমন কার্যকলাপ বোঝায় যা জনসাধারণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্র বা সমাজের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করে।

সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা

বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা আলাদাভাবে নির্ধারণ করেছে।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা:

"যে কোনো কর্মকাণ্ড যা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক বা আদর্শগত উদ্দেশ্যে নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়।"

যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই (FBI) সংজ্ঞা:

"সন্ত্রাসবাদ হলো রাজনৈতিক বা সামাজিক উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত অবৈধ সহিংস কার্যক্রম, যা সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।"

সন্ত্রাসবাদের প্রধান ধরণ

সন্ত্রাসবাদ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ও প্রেক্ষাপটে দেখা যায়। এর কয়েকটি প্রধান ধরন হলো—

১. রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ

রাজনৈতিক মতাদর্শ বা সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংঘটিত সহিংসতা।

উদাহরণ:

  • ফরাসি বিপ্লবের সময় "Reign of Terror"
  • ইতালির "Red Brigades" গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড

২. ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ

ধর্মীয় আদর্শকে ভিত্তি করে সংঘটিত সহিংস কর্মকাণ্ড।

উদাহরণ:

  • আইএসআইএস (ISIS) ও আল-কায়েদার (Al-Qaeda) সন্ত্রাসী কার্যক্রম
  • ভারত ও পাকিস্তানে ধর্মীয় উগ্রবাদী হামলা

৩. রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ

কিছু সরকার নিজেদের স্বার্থে সন্ত্রাসবাদী কৌশল ব্যবহার করে।

উদাহরণ:

  • সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর নিরীহ জনগণের ওপর হামলা
  • উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার গোপন অপারেশন

৪. বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদ

স্বাধীনতার দাবিতে সহিংস কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

উদাহরণ:

  • কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড
  • স্পেনের "ETA" গোষ্ঠীর সহিংসতা

৫. সাইবার সন্ত্রাসবাদ

  • প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ডিজিটাল মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।

উদাহরণ:

  • সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাকিং
  • ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি

সন্ত্রাসবাদের কারণ

  • সন্ত্রাসবাদের উত্থানের পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

১. রাজনৈতিক কারণ

  • দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা
  • মানবাধিকার লঙ্ঘন
  • রাজনৈতিক বৈষম্য

২. অর্থনৈতিক কারণ

  • দারিদ্র্য ও বেকারত্ব
  • সম্পদের অসম বন্টন
  • শিক্ষার অভাব

৩. ধর্মীয় ও আদর্শগত কারণ

  • ধর্মীয় উগ্রবাদ
  • জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়ন

৪. সামাজিক কারণ

  • সামাজিক বৈষম্য
  • গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি
  • সন্ত্রাসবাদের প্রভাব
  • সন্ত্রাসবাদ ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

১. জনজীবনে প্রভাব

  • নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি
  • ভয় ও আতঙ্কের বিস্তার
  • নিরীহ মানুষের প্রাণহানি

২. অর্থনৈতিক প্রভাব

  • বিনিয়োগ ও ব্যবসায় ক্ষতি
  • পর্যটন শিল্পের অবনতি
  • রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়

৩. রাজনৈতিক প্রভাব

  • কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাস
  • সামরিক কার্যক্রম ও যুদ্ধ বৃদ্ধি

সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ

১. আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

  • জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) সন্ত্রাসবাদবিরোধী রেজুলেশন
  • ন্যাটো (NATO) ও ইন্টারপোলের (Interpol) কার্যক্রম

২. বাংলাদেশের পদক্ষেপ

  • সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯
  • র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB)-এর কার্যক্রম
  • জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (NSI) ও ডিজিএফআই (DGFI)-এর ভূমিকা

উপসংহার

সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এটি দমন করতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সঠিক শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কঠোর আইন ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের রুখতে হবে, পাশাপাশি সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

Post a Comment