নারী নিয়ে কিছু কথা
পৃথিবীতে নারী হয়ে জন্মে ও যে মেয়েটা সংসারে তার বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করছে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা ।
স্বামীর দায়িত্বহীনতায় যে মেয়েটা নিজের নারীত্বের ভয় কে পাশে ফেলে , একজন বাবার দায়িত্ব পালন করে যে অর্ধেক পুরুষে নিজেকে রূপান্তর করে , সংসারের ঊপার্জন ক্ষম মা হয়ে নিজের সন্তাদের অন্নের ব্যাবস্থা করেছে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা ।
গনধর্ষনের শিকার হয়েও যে নারী নিজের অহম বিসজর্ন না দিয়ে আত্নহত্যা না করেও , সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে , নিজে বাচঁতে শিখেছে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে মা তার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মতন ঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষা করছে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে পতিতা প্রেমিকের ধোকায় পাড়ায় বিক্রি হয়ে , যে রাত ভর দেহ বিক্রি করে ,নিজের জীবন নিয়ে বাঁচার লড়াই করছে তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে মা অভাবে নিজে না খেয়ে , যে খাবারটা নিত্য তার সন্তানদের খাওয়ায় , এবং নিজে খাওয়ার নাটক করে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
যে নারী রাত ভর ঘরের পুরুষের মার খেয়ে নির্যাতন সয়ে গালের দাগ মেকাপে লুকিয়ে কর্পোরেট অফিসে কাজ করে , শুধু ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসির অভিনয় করে সংসার টিকিয়ে রাখছে তাকে আজ নারী দিবসের শুভেচ্ছা ।
যে নারী পুরুষের রোষানলে পড়ে এসিডের পোড়া মুখ নিয়ে দিব্যি বেঁচে আবার ঘুরে দাড়িয়েছে , আজ তাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা ।
যে মেয়ে দীর্ঘ বছর প্রেমিকের প্রতারনা নীরবে সহে , সময় মতন প্রেমিক তার দায়িত্ব না নেওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ও নিজেকে দাফন করে অন্যের সংসার করছে তাকেও নারী দিবসের আজ শুভেচ্ছা।
নারী মানেই এক বুক সহ্য ক্ষমতা নিয়ে সমাজ টিকিয়ে রাখার মানবতা ।যার ক্ষমতা চা ব্যাগের মতন প্রয়োজনে গরম পানির মতন প্রতিকূলতা আসলেই তার আসল রং দেখতে পাওয়া যায় ।~মাসুমা ইসলাম নদী। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা নারী নিয়ে কবিতা পড়বো। আমার মতে এসব কবিতাই নারী দিবসের সেরা কবিতা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
নারী
কবি কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই -
আমার চক্ষে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এলো পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর,অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারে বল,আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
অথবা পাপ যে - শয়তান যে - নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছেো,দেখিয়াছো তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী,বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্ণী, গানের লক্ষ্ণী, শস্য-লক্ষ্ণী নারী,
সুষমা-লক্ষ্ণী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস,নিশীথে হয়েছে বধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে,নারী যোগায়েছে মধু।
শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল,পুরুষ চালাল হাল নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল,নারী বহে জল,সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালি ধানের শীষে।
স্বর্ণ-রৌপ্যভার নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে,নারীর মিলনে,নর পেল কবি-প্রাণ
যত কথা তার হইল কবিতা,শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা,নারী দিল সুধা,সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’ কত বোন দিল সেবা
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে,শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্ণী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন,রাজারে শাসিছে রানী
রানির দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।
পুরুষ হৃদয়হীন,
মানুষ করিতে নারী দিলো তারে আধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব।
নারী
জাহিদুল ইসলাম
নারী ছাড়া এ জগৎ অকল্পনীয়,
নারী পুরুষের অনুপ্রেরণার উৎস।
নারী তুমি নারী হয়েছো বলে'ই আমরা ধন্য,
পুরুষ আর নারী সৃষ্টি হলো পরষ্পরের জন্য।
নারী বাঁধে, নারী রাধে,
হাতে হাত রেখে পুরুষের কাঁধে।
নারী তুমি পৃথিবীর প্রাণ,
তোমার থেকে সৃষ্ট আমি।
তাই তোমারে জানাই সম্মান।
তুমি বিরল,তুমি ভিন্ন,তুমি সুন্দর
আর তাই তো তুমিই নারী।
নারী তুমি নিজেও জান না,
কতটা ক্ষমতা লুকিয়ে আছে তোমার মাঝে?
সবাইকে নিজের আলোয় আলোকিত করেছো তুমি
দিবা নিত্য সকাল সাঝে।
আসলে নারীকে সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালবাসতে
কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না।
যে বিরল কোমল গুন গুলা মেনে চলে,
তার কাছে প্রতিটা দিনই "নারী দিবস"।
নারী
সুমাইয়া আক্তার
নারী মানে মা
নারী মানে বোন
নারী মানে বউ
নারী মানে ভালোবাসা
নারী মানে জন্ম
নারী মানে ধ্বংস
নারী মানে মমতাময়ী
নারী মানে রাগেশ্বরী
নারী মানে করুণাময়ী
নারী মানে কঠিন শিলা।
নারী মানে মিথ্যেবাদী
নারী মানে স্বার্থপর
নারী মানে ছলচাতুরি
নারী মানে নষ্টা
নারী মানে দেবী
নারী মানে মহিমায়ী
নারী মানে শক্তিশালী
নারী এতটাই শক্তিশালী
সে পুরুষ জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
নারীকে তাই অবজ্ঞা নয়
নারীকে তাই অবহেলা নয়
যে রক্তের গরমে পুরুষ নারীর গায়ে হাত তুলে
সেই রক্ত প্রতি মাসে নারী কাপড়ে জড়িয়ে
ডাস্টবিনে ফেলে।
আজ ৮'ই মার্চ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
অসংখ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান সকল নারী জাতির প্রতি।
নারীকে কে অসম্মান নয়
মনে রেখো তুমিও কোনো নারীর অঙ্গে জন্মগ্রহণ করেছ।
নারীর প্রতি প্রতিশোধ নয়
ভালোবাসা রেখো
জীবন বদলে যাবে।
নারী
তানিয়া হাসান
নারী হলো আল্লাহ তায়ালার
অপূর্ব এক সৃষ্টি,
নারী হলো পুরুষ মনে
ভালোবাসার বৃষ্টি।
নারী হলো একটা ভাইয়ের
খুব আদরের বোন,
খুনসুটিতে মাততে যাকে
ভীষন প্রয়োজন।
নারী হলো বাবার কাছে
রাজকন্যার মতো,
ভালোবাসা কম হয় না
থাকুক দুরেই যত।
নারী হলো মায়ের কাছে
ছোট্ট একটা পরী,
একটু বিপদ আচঁ পেলেই
যার হাতটি ধরি...
নারী হলো প্রেমিক মনের
সবচেয়ে বড় আশা,
নারী হলো একটা ছেলের
অনেক ভালোবাসা।
নারী হলো স্বামীর জীবনে
সফলতার সব কারণ,
দেখলে যারে বুঝতে পারে
"হার" মেনে নেওয়া বারণ।
সবশেষেতে নারী হলো
মায়ের প্রিয় মুখ,
যার হাসিতে, কষ্ট ভুলি
পাই হৃদয়ে সুখ।
"আমি নারী"
রুমা রাণী ঘোষ
আমি নারী!
তাই বলে আমি পুতুল নই,
সবাই আমাকে পুতুল ভেবে নাচিয়ে চলে
কিন্তু! আমিও যে ক্লান্ত হই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি পাথর নই,
সবাই আমাকে পাথর ভেবে আঘাত করে
কিন্তু! আমিও যে দুঃখ পাই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি অন্ধ নই,
সংসারে অন্ধ আমিটাতেই যেন শান্তি
কিন্তু! আমিও যে দেখতে পাই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি বোবা নই,
যে যার মতো আমায় শুনিয়ে চলে
কিন্তু! তবুও আমার উত্তর দিতে নেই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি যন্ত্র নই,
সবাই আমাকে যন্ত্র ভেবে চালিয়ে যায়
কিন্তু! মাঝেমধ্যে আমারও যে বিশ্রাম চাই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি দৈত্য নই,
বরের মতো ৯-৫ টার অফিস করার পরও
ঘরের সব কাজ কেনো আমারই ভাই?
আমি নারী!
তাই বলে আমি ম্যাজিশিয়ান নই,
প্রয়োজনে সবার কাছে আমি ম্যাজিশিয়ান
কিন্তু! প্রয়োজন ফুরালেই মূল্য নাই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি হৃদয়হীন নই,
হাজার কিছু করার পরও যখন কথা শুনি
তখন আমিও যে অদৃশ্য বারিতে হৃদয় ভাসাই।
আমি নারী!
তাই বলেই আমি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের স্বীকার হই,
পান থেকে চুন খসলেই
নিজের বাড়ির সন্ধানে বারই।
আমি নারী!
তাই বলে আমি জল নই,
সবাই আমাকে জলের মতোই ব্যবহার করে
আমিও যে সুখ - শান্তি অবিচল রাখতে
যে পাত্রে রাখে সে পাত্রের আকাড়ই ধারণ করি।
নারী
কামরান চৌধুরী
তুমি নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের মতো পরিত্যক্ত
তুমি বিরহের, ভালোবাসার কবিতা,
তুমি মানুষের, তুমি ইশ্বরের,
তুমি জগত সংসারের,তুমি পুরো পৃথিবীর।
নারী
উম্মে হাফসা
ঘরের পাটি,ঘরের খুঁটি
নিজের স্বামী,সন্তান,
তাদের খেয়াল রাখার জন্যে,
আল্লাহ তোমায় করলেন দান।
তুমি নারী ঘরের রাণী
তুমি সবার সেরা,
ত্রিভুবন সব শূন্য হবে
তোমার মায়া ছাড়া।
চার দেয়ালে যতন করে
রেখে ছায়ার তলে,
পুরুষ দিলেন ঘরের বাইরে
যেন সংসার চলে।
তোমার উপর কাজের বোঝা
দেননি আল্লাহ চেপে,
তবে কেন সেই বোঝাটা
মাথায় নেবে মেপে।
তবে কেন ভীড় ঠেলে হায়
রোদে,ঘামে পুড়ে,
ঘর থেকে পা বাইরে রাখো
শীতলপাটি ছেড়ে?
তোমার জন্যে মহান আল্লাহ
দিলেন বাবা,ভাই,
স্বামী-সন্তান ছাড়া তো আর
আপন কেহ নাই।
তুমি নারী,সর্বেসর্বা নিখুঁত
আল্লাহর সৃষ্ট,
ধরিয়া তবে রাখিও সে মান
হয়োনা পথভ্রষ্ট।
নারী ও কবিতা
আমান
নারী ও কবিতা দুই ই আমার
হৃদয়ের কাছে প্রিয়,
নারী কে নিয়ে কবিতা লেখা
সৃষ্টি কবিতায় শ্রেয়।
নারী আর নদী কবিতার স্বাদ
কবিকে পাগল করে,
নারী বিহীন এই জগত সংসার
বিশ্ব চলিবে না-রে।
সাগরের চেয়ে অঢেল বড়
কোমল নারীর মন,
নারীর কারণে বেঁচে থাকে কবি
কবিতায় সারাক্ষণ।
বাঁচে প্রকৃতির সবুজ-সমুদ্র
নদীর কুল কুল ধ্বনি,
নারী আছে তাই এখনো আমরা
পাখির কলরব শুনি।
নারী তুমি ছিলে নারী তুমি আছ
নারী থাকিবে যত দিন,
কবি ও কবিতা পৃথিবী থাকিবে
অপরূপ অমলিন।
নারী
হাসান অন্তিম
নারী সুন্দর, নারীই রূপেশ্বর,
নারী বিপদজনক, নারীই ভয়ংকর।
কেউ দেখায় রূপের অহংকার,
আবার কেউ পড়ে থাকে সরলতার অলংকার।
কেউ সামান্য আঘাত পেয়ে করে হাহাকার,
আবার কেউ এক বুক কষ্ট ভরা সমুদ্র নিয়েও করে না কোন চিৎকার।
কেউ হাজার জিনিস পেয়েও, শেষ হয় না তার আবদার,
আবার কেউ নিজ পরিবারের অভাব দেখে,বিসর্জন করে তার চাহিদার।
নারী সুন্দর, নারী বিচিত্র,
নারী ভ্রম্যান্ড্যের অজানা এক সূত্র।
কেউ পিশাচ শ্রেণীর হয়েও অভিনয় করে,যেন সে তোমার মিত্র,
আবার কেউ আছে,যার চরিত্র ফুলের চেয়েও পবিত্র।
নারী জঘন্য, নারীই মানব সমাজের জন্য এক বিরাট তিরস্কার,
নারী সুন্দর, নারীই খোদার তরফ থেকে এক অপূর্ব উপহার।
নারী বীপদজনক, নারীই পুরুষ জাতির জন্য এক দুঃখের সমাচার,
নারী পবিত্র, নারীই খোদার রূপে মায়ের অবতার।
নারী বিশ্বস্ত, নারীই স্নেহময়ী,
নারী নিকৃষ্ট, নারীই ছলনাময়ী।
কেউ মায়া লাগিয়ে ছলনা করে চলে যায়,থেকে ক্ষণস্থায়ী,
আবার কেউ ভালোবেসে থেকে যায় জীবনে চিরস্থায়ী।
নারী সুন্দর, নারীই রূপেশ্বর,
নারী বিপদজনক, নারীই ভয়ংকর।
কেউ হয় মাথার বোঝো সবার,
আবার কেউ গর্ব, নিজের পিতার।
কেউ যৌতুক না দিতে পারায়, নির্যাতন করে পড়িয়ে দেয় তাকে কাফনের চাদর,
আবার কেউ লক্ষ লক্ষ মুদ্রা দেয়ায়, বর্ষিত হয় তার উপর সুখের আদর।
কবিতা লিখে বোঝাতে চেয়েছি অবস্থা, নিজের মানবিক চেতনার,
আমিও তোমাদের মতোই, মানুষ নামে এক আজব জানোয়ার।
-হাসান অন্তিম