আন্তর্জাতিক নারী দিবস
প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। এটি নারীদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি বিভিন্নভাবে উদ্যাপিত হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে, আবার কোথাও তাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নারী দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক নারী
দিবস
উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে
দীর্ঘ
সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭
সালে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের
সুতা
কারখানার নারী
শ্রমিকেরা মজুরি
বৈষম্য,
কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা
এবং
কাজের
অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। এই
আন্দোলনের ফলে
তাদের
উপর
লাঠিচার্জ এবং
দমন-পীড়ন চালানো হয়।
পরে
১৯০৯
সালে
নিউইয়র্কে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী
সংগঠনের উদ্যোগে প্রথম
নারী
সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়।
জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী
ক্লারা
জেটকিন
এই
আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখেন
এবং
১৯১০
সালে
কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী
সম্মেলনে প্রতি
বছর
৮
মার্চ
নারী
দিবস
পালনের
প্রস্তাব দেন।
১৯১১
সাল
থেকে
বিভিন্ন দেশে
এটি
পালিত
হতে
থাকে
এবং
১৯৭৫
সালে
জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।
আধুনিক সংস্কৃতি ও উদ্যাপন
বর্তমানে বিশ্বের অনেক
দেশ
নারী
দিবস
উপলক্ষে সরকারি
ছুটি
ঘোষণা
করে।
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, কিউবা,
রাশিয়া, কাজাখস্তান, ভিয়েতনামসহ অনেক
দেশে
এটি
সরকারি
ছুটির
দিন
হিসেবে
পালিত
হয়।
চীন,
নেপাল
এবং
কিছু
দেশে
শুধুমাত্র নারীরা
এই
দিন
ছুটি
ভোগ
করেন।
এই
দিনে
বিভিন্ন সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া
হয়
এবং
তাদের
ক্ষমতায়ন নিয়ে
আলোচনা
করা
হয়।
জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য
জাতিসংঘ প্রতি
বছর
নারী
দিবসের
জন্য
একটি
বিশেষ
প্রতিপাদ্য ঘোষণা
করে।
যেমন,
২০১৯
সালে
"সবাই
মিলে
ভাবো,
নতুন
কিছু
করো,
নারী-পুরুষ সমতার নতুন
বিশ্ব
গড়ো"
এবং
২০২১
সালে
"করোনাকালে নারী
নেতৃত্ব গড়বে
নতুন
সমতার
বিশ্ব"
প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা
হয়।
এর
মাধ্যমে নারীর
ক্ষমতায়ন ও
লিঙ্গ
সমতার
গুরুত্ব তুলে
ধরা
হয়।
বছর-জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য
১৯৯৬ -অতীত উদ্যাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
১৯৯৭ -নারী এবং
শান্তি
১৯৯৮ -নারী এবং
মানবাধিকার
১৯৯৯ -নারী প্রতি
সহিংসতামুক্ত পৃথিবী
২০০০ -শান্তি স্থাপনে একতাবদ্ধ নারী
২০০১ -নারী ও
শান্তি
: সংঘাতের সময়
নারীর
অবস্থান
২০০২ - আফগানিস্তানের নারীদের বাস্তব
অবস্থা
ও
ভবিষ্যৎ
২০০৩ -লিঙ্গ সমতা
ও
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
২০০৪ -নারী এবং
এইহ
আই
ভি/
এইডস
২০০৫- লিঙ্গ সমতার
মাধ্যমে নিরাপদ
ভবিষ্যত
২০০৬ -সিদ্ধান্ত গ্রহণে
নারী
২০০৭ -নারী ও
নারী
শিশুর
ওপর
সহিংসতার দায়মুক্তির সমাপ্তি
২০০৮ -নারী ও
কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ
২০০৯ - নারী ও
কিশোরীর প্রতি
সহিংসতা বন্ধে
নারী-পুরুষের একতা
২০১০ -সমান অধিকার,
সমান
সুযোগ-
সকলের
অগ্রগতি
২০১১ -শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর
সমান
অংশগ্রহণ
২০১২ -গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন- ক্ষুধা
ও
দারিদ্র্যের সমাপ্তি
২০১৩ -নারীর প্রতি
সহিংসতা বন্ধে
পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই
সময়
২০১৪ -নারীর সমান
অধিকার
সকলের
অগ্রগতির নিশ্চয়তা
২০১৫ -নারীর ক্ষমতায়ন ও
মাবতার
উন্নয়ন
২০১৬ -অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান[২০][২১]
২০১৭ -নারী-পুরুষ
সমতায়
উন্নয়নের যাত্রা,
বদলে
যাবে
বিশ্ব
কর্মে
নতুন
মাত্রা।
২০১৮ -সময় এখন
নারীর:
উন্নয়নে তারা,
বদলে
যাচ্ছে
গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা
২০১৯ -সবাই মিলে
ভাবো,
নতুন
কিছু
করো
নারী-পুরুষ সমতার নতুন
বিশ্ব
গড়ো[২২]
২০২০ -প্রজন্ম হোক
সমতার,
সকল
নারী
অধিকার
২০২১ - করোনাকালে নারী
নেতৃত্ব গড়বে
নতুন
সমতার
বিশ্ব
উপসংহার
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতীক। এটি শুধু নারীদের সম্মান জানানোর দিন নয়, বরং তাদের অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করার অঙ্গীকারের দিন। সমাজে নারীদের সমান সুযোগ ও মর্যাদা প্রদান করা হলে তবেই সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব।