ভালবাসা দিবসের কবিতা।বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কবিতা।valobasha dibosh kobita

ভালবাসা দিবস, যা বিশ্বব্যাপী ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত, প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়। এটি প্রেম, স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশের দিন হিসেবে বিবেচিত হয়।

মূলত, এই দিবসটির ইতিহাস রোমান সাম্রাজ্যের সময়কার সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন যাজকের সঙ্গে যুক্ত। বলা হয়, তিনি প্রেমিকদের গোপনে বিবাহ সম্পন্ন করতেন, যা তৎকালীন সম্রাটের আদেশের বিরোধী ছিল।

আজকের দিনে, ভালবাসা দিবস শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি বন্ধু, পরিবার এবং কাছের মানুষদের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে ফুল, চকলেট, কার্ড ও উপহার দিয়ে ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেন।

প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং ভার্চুয়াল উপহার পাঠানোর প্রবণতাও বেড়েছে। তবে, ভালবাসা শুধুমাত্র একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়; প্রতিদিনই আমাদের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। এই দিনটি কেবলমাত্র ভালোবাসার গুরুত্বকে উপলব্ধি করিয়ে দেওয়ার একটি বিশেষ উপলক্ষ।

সত্যিকারের ভালোবাসা অর্থ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, নির্ভরতা ও সহমর্মিতা বজায় রাখা। তাই, শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, সারাবছরই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন! ❤️

কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায় 
- বুদ্ধদেব বসু



কেমন করে বলি?


কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,

যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান

দিগন্ত থেকে দিগন্তে;



কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;

চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,

মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।



তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,

স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।

গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,

কেমন করে বলি?



আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায়না।

গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত!

-তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো


যা এতদিন পাইনি?



রূপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে; সমস্ত আকাশ

নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকের উপর

সূর্যের চুম্বনে।-এখানে জ্ব’লে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধণু

তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে

কখনো কি ভেবেছিলে?



কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম

দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে

জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার

কী ভালো লেগেছিল।



তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ মুখ। দ্যাখো, দ্যাখো,

কেমন নীল এই আকাশ-আর তোমার চোখে

কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম

কেমন করে বলি?

কথোপকথন-১১ 
পূর্ণেন্দু পত্রী



– তুমি আজকাল বড্ড সিগারেট খাচ্ছ শুভন্কর।

– এখুনি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি…

কিন্তু তার বদলে??

–বড্ড হ্যাংলা। যেন খাওনি কখনো?

– খেয়েছি।

কিন্তু আমার খিদের কাছে সে সব নস্যি।

কলকাতাকে এক খাবলায় চিবিয়ে খেতে পারি আমি,

আকাশটাকে ওমলেটের মতো চিরে চিরে,

নক্ষত্রগুলোকে চিনেবাদামের মতো টুকটাক করে,

পাহাড়গুলোকে পাঁপর ভাজার মতো মড়মড়িয়ে,



আর গঙ্গা?

সে তো এক গ্লাস সরবত।



–থাক। খুব বীরপুরুষ।

–সত্যি তাই…



পৃথিবীর কাছে আমি এই রকমই ভয়ন্কর বিস্ফোরণ।

কেবল তোমার কাছে এলেই দুধের বালক,

কেবল তোমার কাছে এলেই ফুটপাতের নুলো ভিখারি,

এক পয়সা, আধ পয়সা কিংবা এক টুকরো পাউরুটির বেশী আর কিছু চিনিয়ে নিতে পারিনা।



–মিথ্যুক..।

–কেন?

–সেদিন আমার সর্বাঙ্গের শাড়ি ধরে টানমারনি?

– হতে পারে।

ভিখারিদের কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করবে না একদিনও??


বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা 
আবুল হাসান


মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল?

একবার ডাউন ট্রেনের মত বৃষ্টি এসে থেমেছিল

আমাদের ইস্টিসনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো

উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা,

ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায় পাড়ায়

জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান ।



তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙ্গে যাইনি মিটিং -এ

থিয়েটার পশু হলো এ বৃষ্টিতে সভা আর

তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে;

ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা,

সারাদিন অমুক নিপাত যাক ,আমুক জিন্দাবাদ

আমুকের ধ্বংস চাই বলে আর আবিজাবি হলো না পাড়াটা ।



ভদ্রশান্ত কয়েকটা গাছ শুধু বেফাঁস নারীর মতো

চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে আর

পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা

স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার !



আর ক`টি চা`খোর মানুষ এলো

রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে ;

তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলায় শোনা গেল:

কি করি বলুন দেখি দাত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা,

ডাক্তারের কাছে যাই তবু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই

হৃদরোগ , চোখের অসুখ !



একজন বেরসিক তার মধ্যে বলে উঠলো :

বৃষ্টি মানে বুঝলেন তো অযথাই যানবাহন , বাড়তি খরচ !



একজন বাতের রোগী গলা কাশলো:

ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশি লেবু দিও ।



তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু

সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের

কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল,

সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে

আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন

আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল !



মন ভালো নেই 
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই

কেউ তা বোঝে না সকলি গোপন মুখে ছায়া নেই

চোখ খোলা তবু চোখ বুজে আছি কেউ তা দেখেনি

প্রতিদিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়

আশায় আশায় আশায় আশায়

এখন আমার ওষ্ঠে লাগে না কোনো প্রিয় স্বাদ

এমনকি নারী এমনকি নারী এমনকি নারী

এমনকি সুরা এমনকি ভাষা

মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই

বিকেল বেলায় একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে

একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে পথে ঘুরে ঘুরে

কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না কারুকে চাইনি

কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না

আমিও মানুষ আমার কী আছে অথবা কী ছিল

আমার কী আছে অথবা কী ছিল

ফুলের ভিতরে বীজের ভিতরে ঘুণের ভিতরে

যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন

মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই

তবু দিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়

আশায় আশায় আশায় আশায়



তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা 
শহীদ কাদরী



ভয় নেই

আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী

গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে

মার্চপাস্ট করে চলে যাবে

এবং স্যালুট করবে

কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।



ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে

কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে

আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে

ভায়োলিন বোঝাই করে

কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।



ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-

বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো

মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো

প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে

কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।



ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো

একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী

এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়

সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!



সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে-

আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক

অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন

সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর

লাল নীল সোনালি মাছি-

ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা।



ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে

শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন

আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে

গণচুম্বনের ভয়ে

হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।



ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো

অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

স্টেটব্যাংকে গিয়ে

গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে

একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।



ভয় নেই, ভয় নেই

ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী

কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে

নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।



তোমার চোখ এতো লাল কেন?
- নির্মলেন্দু গুণ


আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই

কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,

শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।

বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।



আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে

কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,

আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ

নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।

আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :

আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,

পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা

তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।

এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।



আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা

খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।

কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে

জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’



প্রস্থান 
হেলাল হাফিজ


এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিও।

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিও।



ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিও।



কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিও, পত্র দিও।



আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?


আমি না হয় ভালবাসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,

এক মানবী কতোটা বা কষ্ট দেবে!


ভালোবাসা দিবসের কবিতা
–যুবক অনার্য


তার সাথে একটি দীর্ঘ বিরতি কেটে গিয়েছিলো
আমাকে খুঁজে বের করা তার কাছে সহজ ছিলো না
কারণ আমি কখনো চাইনি সে আমাকে খুঁজে পাক
সাত বছর পর দেখা হলো স্বাধীনতা উদ্যানে
আমি পছন্দ করি বলে কবিতার মতন
কপালে পরেছিলো কালো টিপ
‘কাকতালীয়’ বলে যে একটা ব্যাপার আছে
বিশ্বাস না করে পারলুম না
সে পরেছিলো একটি কালো জামদানি
আমার পরনেও কালো পাঞ্জাবি আর জিন্স
মন্দিরের সামনে অচল মুদ্রার মতন পুকুর, তার সিঁড়িতে
বসলাম পাশাপাশি। মাঝখানে শূন্যতা। সংস্কারের দেয়াল
ঝুপঝুপ বৃষ্টি শুরু হলো
আমরা মন্দিরের বাউন্ডারির ভেতরে ঢুকে পড়লাম
পশ্চিম পাশে একটি নতুন ঘর তখোন অর্ধনির্মিত
তার বারান্দায়- কী অদ্ভুত- দুইটি চেয়ার
আমাদের উদ্দেশেই বুঝি রাখা ছিলো!
ওখানটায় বসে চেয়ার দুইটির শূন্যতা উড়িয়ে দিলাম
তার ঠোঁট কাঁপছিলো। কথা বলতে পারছিলো না
অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে বসে আছে
এতোদিন পরেও কি মানুষ ওসব মনে রাখে!
বেশ কিছুক্ষণ পর
ব্যাগ থেকে সে বের করলো আটটি লাল গোলাপ
প্রথমে একটি গোলাপ কম্পিত হাতে
আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো
তারপর চারটি গোলাপ
তারপর তিনটি গোলাপ
আমি তাকে ধন্যবাদ দেই নি
আমার চোখের ভাষায় সম্ভবত
সে তা টের পাচ্ছিলো
আর তাকিয়ে ছিলো-
কী গাঢ় আর স্নিগ্ধ দু’টি চোখ
করতলে অন্ধকার নিয়ে অনন্তকালের মতো বহমান
আমি তার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলাম
কিন্তু তখোন অনেক দেরি হয়ে গ্যাছে
সে ফিরে গিয়েছিলো আমার ক্ষমা আর অক্ষমতা নিয়ে
আমিও ফিরে এসেছি তার বিলম্বিত ভালোবাসা নিয়ে
আমার শুধু মনে পড়ছিলো- ভলোবাসা হয়তো শেষ কথা নয়!

বুক ভরা ভালোবাসা
মনসুর আজিজ


যদি নিতে চাও দিতে পারি বুক ভরা ভালোবাসা নদী

দিতে পারি চরাচর, পরিপাটি সবুজের সম্ভার

তরু বীথিকা স্বচ্ছ হীরক নিটোল দিঘির জল

যদি নিতে চাও দিতে পারি খোপায় গুঁজে

কামিনী গোলাপ বেলী জুঁই চামেলী

বকুলের মালা গলায় জড়িয়ে দিতে পারি; নিতে যদি চাও



বাবুইয়ের বাসা ভরা গান দিতে পারি; নিতে যদি চাও

লাল শাড়ি নীল পেড়ে রূপোর নূপুর রিনিঝিনি চুড়ি

আলতা রাঙানো পথ করে দিতে পারি; নিতে যদি চাও



যদি নিতে চাও, দিতে পারি সুরেলা বাঁশি

গয়না নাওয়ের ছইয়ে বসে ঢুলু ঢুলু মন

বালিহাঁস শটিবন পলি ভরা চর

কুলু কুলু ধ্বনি, পাড় ঘেঁষে সারি সারি গাঁও

ঘরবাড়ি গেরস্থালি উঠোন জুড়ে হাঁসের ছানার ছুটোছুটি



যদি নিতে চাও দিতে পারি দুহাতে যুগল পায়রা

উড়াতেও পারো, মেঘ কেটে নীল নীল সুনীল আকাশে


ভালোবাসা দিবস
- বেঞ্জিন বেঞ্জয়েট


" বিশ্ব ভালোবাসা দিবস "...
এইদিনটির জন্য ভালোবাসা নাকি
ভালোবাসার জন্য এইদিনটি খুঁজি উত্তর সেই ,
এইদিনটির জন্য ভালোবাসা হলে
বাঁকি দিন গুলিতে কি ভালোবাসার প্রয়োজন নেই ?

অনেকের উত্তর পেয়েছি ঢের ঢেরাধিক
কেউ বলেছে এইদিনটিতে ভালবাসবো বিশেষভাবে ,
যদি তাই হয় অন্যদিনে ঠুনকা ভালবাসলে
বলতে পারেন সেই ভালোবাসা কতটুক টিকে রবে ?

উত্তর যে পাইনি ঠিক তাহা নয়
যাহা হবার হবে , অতো অতো ভাবেন কেন কবি সাব ?
পর্দার আড়ালে থেকে থেকে নারীরা ঘামে চুপসায়
তাই এইদিনটার উছিলায় ছিন্ন করা হয়েছে হিজাব ।

নাউজুবিল্লাহ ...
পৃথিবীর সবাই পিছু লেগেছে ইসলামের
উলঙ্গ করে চিবিয়ে খায় ...
কেউ খায় ছিল্লা ।

যদি ভালোবাসার জন্য এইদিনটি হয়
বাঁকি দিন গুলিতে কেন নয় ?
সারা বছরের ভালোবাসা জমে জমে কি
একদিনেই হয়ে যাবে পরিণয় ?

জবাব মিলেছে তার ... ধুর পাগল কবি
এইদিনটি উপলক্ষ মাত্র আদতে সব দিনই সমান ,
এইদিনটিকে নির্ধারণ করে সবখানে সবাই
দিয়ে যায় হৃদয় নিংড়ায়ে ভালোবাসার মান ।

মানদণ্ডে বিচার করে কি ভালোবাসা হয় ?
হুজুগের পৃথিবী হুজুগি মানুষ গোটা জগৎময় ।
সবার তালে তাল মিলিয়ে সবাইকে দিয়ে গেলাম প্রেম ,
আদতে প্রকৃত ভালোবাসা এখনো হয়নিকো কায়েম ।
জয় হোক ভালোবাসার , ভালোবাসা জিন্দাবাদ ,
রাখেনা যেন স্বার্থের ধরায় ধনী গরীবের তফাৎ ।

Post a Comment