পারো তো ধর্ষণ করো
তসলিমা নাসরিন
আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,
আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,
অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,
খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা
অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ।
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও
বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।
চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,
মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!
ধর্ষণ
জুনায়েদ বি রাহমান
ঘরেআগুন; ষোড়শী অর্ধাঙ্গিনী!
তবুও, প্রথম দেখায় কুলাঙ্গারে অভ্যন্তরে
কম্পন সৃষ্টি করে- চতুর্দশী বালিয়াড়ি;
বিকৃত মস্তিষ্কে খেলা করে কামার্ত ভাবনা।
দিন শেষে,
নৈঃশব্দ্যে আনমনা বাতাসে ভেসে
বেড়ায় বালিয়াড়ির চাপা কান্না, বুকভরা
হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস!
জেনে—শুনে—বিবেকের দংশনে
ফেইসবুক,ব্লগ,মিডিয়ায় প্রতিবাদী সুর উঠে,
সুর উঠে রাস্তায়,বাজারে, মুখে মুখে-
—"বিচার চাই, বিচার চাই
ধর্ষকের ফাঁসি চাই!"
কখনো কখনো আল্টিমেটাম দিয়ে বসে
বিভিন্ন মানবিক সংগঠন।
বাধ্য হয়ে অপরাধীকে আইন বদ্ধ করার
প্রতিশ্রুতি দেয়- প্রশাসন।
তারপর,চলে যায় কয়েকদিন;
আরো কয়েকদিন...
—এভাবেই অতিক্রান্ত সময়ের সাথে
অস্পষ্ট হতে হতে একসময় অস্তিমান প্রাণ
থেকে হারিয়ে যায় প্রতিবাদী সুর।
ওদিকে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে
বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষরূপী অসুর।
অতঃপর, ফের ধর্ষণ-আন্দোলন-ক্ষণিক
অনুলেখ! —এ যেন বাংলার এক ভ্রষ্ট শৃঙ্খল
ধর্ষণ
মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকী
ছোট্ট একটি কন্যা সন্তান,
বয়স মাত্র সাত।
ধ্বংস করল তার জীবন
ধর্ষকের নোংরা কালো হাত।
দুই- চার বছরের শিশু শুধু নয় ,
ধর্ষনের শিকার আরো,
স্কুল-কলেজের তরুণী , গৃহবধূ,
ধর্ষকের সঠিক বিচার হয়না ,
ধর্ষনের মামলার তারিখ,
পিছিয়ে যায় শুধু।
কী দোষ ছিল অবুঝ শিশুর?
এই নোংরা দুনিয়ার
বুঝতনা কিছু,
তবুও শিশুরা ধর্ষনের শিকার,
দস্যু- হায়নাদের কে দিল
নারীর জীবন নষ্ট করার অধিকার।
ঘরে কি তার মা – বোন নেই,
যদি হয় কখনও মেয়ে ,
মেয়েকে কেউ ধর্ষন করলে
হায়রে পাপী চোখের সামনে
মেয়ের এই অসহায়তা ,
দেখবি কী চেয়ে চেয়ে?
ধর্ষনের শাস্তি চাই ,
কঠোর থেকে কঠোরতর,
এক বিচারেই রায় হবে ,
ধর্ষকের জন্য শাস্তি হবে কার্যকর।
ধর্ষক
- প্রবীর রায়
বিশ্বে আজ দানবের জোড়,ক্ষমতাই করছে পাপ,
শিশু-বৃদ্ধের দেহে খুঁজছে, যৌনতার ভিন্ন তাপ,
বিবেক ভেঙে লোভে মেতে,দিচ্ছে সুযোগে ছোবল,
তাদের সঙ্গী নেতা-প্রশাসন, মায়ের ফাঁকা কোল,
জঙ্গলে-সড়কে-গোপনে-প্রকাশ্যে,চলছে মারণ খেলা,
মানবতা বিক্রি-চেতনা দিশাহীন,ধর্ষিতার জোটে হেলা,
সমাজে আজ ধর্ষক ব্যক্তি, বহুরূপী সাজ সেজে,
বিপদ আনে তৃপ্তি মেটাতে,কামাগ্নি সব লেজে,
চতুর্দিকে একটাই ভয়,পদে-পদে ফাঁদ পাতা,
প্রতিবাদের মুখগুলো আজ,ধরছে ধর্ষকের ছাতা,
ধর্ষক মূর্খ ধর্ষক শিক্ষিত, ধর্ষক শিশু-যুবক,
পৃথিবী মাকে করছে ধর্ষণ, সমাজ এতটাই বুড়বক,
বাঁচাতে নারী দেশের মান,জাগো বাংলার মানুষ,
ভাঙো অভিশাপ কেউটে মেরে,ফেরাও নিজ মান+হুঁশ।।
এসো ধর্ষণ করো
ঋষি
যেটুকু সময় আমাকে দিলে
সেটা শুধু শরীর।
আমার সমস্ত মাধুরী ,সমস্ত অস্তিত্ব শরীরময়
আর যোনি।
যা সদা ব্যস্ত পুরুষ তোমার কামনার বীর্যপাতে
সম্ভোগে।
ঠিক এই টুকু নিয়ে আমি আসিনি
না কখনো আসতাম না জানলে মায়ের গর্ভে কারোর কন্যা হয়ে.
পুরুষ তুমি কি জানো মেয়েরা শরীর হতে চায় না
হতে চাই আশ্রয় পৃথিবীর জন্মের।
হতে চাই প্রেমময় কোনো স্বপ্নের মতন নারী
কারোর মাতা ,কারোর ভার্যা ,কারো প্রেম হয়ে।
কত বয়স ছিল আমার
মাত্র আঠাশ দিন।
কি বুঝতাম আমি এই মায়াময় শরীরের খেলার
কি উত্তর আছে তোমার পুরুষ।
তোমার দাঁড়ানো দন্ডকে আমার একটাই প্রশ্ন
তুমি কি মায়েরও মুখে যোনি দেখ ,আর করো বীর্যপাত তোমার সম্ভোগে।
আর আমার প্রশ্ন এই ভদ্র মুখোশধারী অপবিত্র সময়কে
আর কত ধর্ষণ উপভোগ করবে খবরের পাতায়।
ঠিক কথা ,হক কথা
তোমার কন্যা নয় আমি ,তোমার ভার্যা বা কোনো রক্তের বাহক নয় আমি।
তবে আর কি এসো ধর্ষণ করো আমাকে
আমার উন্মুক্ত রক্তাক্ত যোনিপথে তোমরাও নিলজ্জ কর সময়।
এসো আরো রক্তাক্ত করো আমার আঠাশ দিনের বেঁচে থাকাকে
আরো যন্ত্রণা বাড়ুক নারীত্বের বিবস্ত্র ইতিহাসের।