দোল উৎসব রচনা
দোল উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি ফাল্গুন বা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। এই উৎসবকে হোলি নামেও অভিহিত করা হয়, বিশেষত ভারতবর্ষে। এটি মূলত রঙের উৎসব, যেখানে মানুষ একে অপরকে আবির ও রঙ মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।
উৎসবের পটভূমি
দোলযাত্রার সঙ্গে বহু পুরাণ ও ধর্মীয় কাহিনি জড়িত। প্রধানত এটি শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমের স্মৃতিবাহী উৎসব। কথিত আছে, কৃষ্ণ তার গায়ের শ্যামবর্ণ নিয়ে দুঃখিত ছিলেন এবং তার মা যশোদা তাকে পরামর্শ দেন, তিনি যেন রাধার মুখে রং মেখে দেন। কৃষ্ণ তাই করেন এবং এই ঘটনা থেকেই রঙ খেলার সূচনা হয়।
অন্যদিকে, ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার ও ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনিও এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কিন্তু হিরণ্যকশিপু চাইতেন প্রহ্লাদ তাকে উপাসনা করুক। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রহ্লাদকে তার বোন হোলিকার সঙ্গে আগুনে বসিয়ে দেন, কারণ হোলিকা ছিল আগুনে অমর। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পান এবং হোলিকা পুড়ে যান। এই ঘটনাকে স্মরণ করে দোলের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ পালিত হয়।
উদযাপন প্রক্রিয়া
দোল উৎসবের দিন সকালে ভক্তরা গায়ে আবির মাখেন, শোভাযাত্রা বের করেন এবং রঙ খেলায় মেতে ওঠেন। বিশেষ করে, মথুরা ও বৃন্দাবনে এটি অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বসন্ত উৎসব’ হিসেবে দোলযাত্রাকে বিশেষভাবে প্রচলিত করেন। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পীতবসন পরে গান, নৃত্য ও কবিতা পাঠের মাধ্যমে উৎসব পালন করে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
দোলযাত্রা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এদিন শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করে। এটি মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
উপসংহার
দোলযাত্রা হিন্দু ধর্মের অন্যতম আনন্দময় উৎসব, যা মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। এটি প্রকৃতির নবজাগরণেরও প্রতীক। তাই, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এই উৎসব উপভোগ করা উচিত।