হিযবুত তাহরীর একটি ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:
১. উগ্রবাদী মতাদর্শ
হিযবুত তাহরীর একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে, যা প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সংবিধানের পরিপন্থী। তাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড অনেক সময় উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
২. রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম
বাংলাদেশ সরকার মনে করে, হিযবুত তাহরীর রাষ্ট্রের সংবিধান ও সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
৩. সহিংসতার অভিযোগ
যদিও সংগঠনটি সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষ নেয় না, তবুও তাদের মতাদর্শ অনেক ক্ষেত্রে সহিংস উগ্রপন্থার দিকে ধাবিত হতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে।
৪. বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধকরণ
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশেও হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ। ফলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার দিক থেকেও বাংলাদেশ সরকার তাদের কার্যক্রমে শঙ্কিত হয়েছে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা
এটি বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং তাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে চায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধের সময় ও প্রেক্ষাপট
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর সংগঠনটি গোপনে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থাকে।
সংক্ষেপে:
হিযবুত তাহরীরের মতাদর্শ, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম, গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান এবং উগ্রবাদী চিন্তাধারা প্রচারের কারণে এটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে।
হিযবুত তাহরীর আকিদা
হিযবুত তাহরীরের আকিদা ও বিশ্বাস
হিযবুত
তাহরীর
একটি
ইসলামী
রাজনৈতিক সংগঠন,
যা
একক খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং
শরিয়াহভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাকে
তাদের
প্রধান
লক্ষ্য
হিসেবে
দেখে।
তাদের
আকিদা
ও
মতাদর্শ মূলত
নিম্নলিখিত বিষয়ের
ওপর
ভিত্তি
করে
গঠিত:
১. ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস (আকিদা)
হিযবুত
তাহরীর
সুন্নি
ইসলামকে অনুসরণ
করে
এবং
তাদের
আকিদা
আহলুস
সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহ-এর কাছাকাছি। তবে
তাদের
দৃষ্টিভঙ্গি ও
রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রচলিত ইসলামী
সংগঠনগুলোর থেকে
ভিন্ন।
তাদের
আকিদার
মূল
দিকগুলো হলো:
(ক) তাওহীদ
ও রিসালাত:
- তারা একত্ববাদ
(তাওহীদ) এবং নবুওতের (রিসালাত) ওপর বিশ্বাস রাখে।
- তারা মনে করে, ইসলামের পূর্ণাঙ্গ
বাস্তবায়ন কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভব।
(খ) শরিয়াহ
ও খিলাফত:
- হিযবুত তাহরীর বিশ্বাস করে, খিলাফত
(একক ইসলামী রাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি মুসলমানের ফরজ দায়িত্ব।
- তারা গণতন্ত্র,
জাতীয়তাবাদ, ও বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ইসলামের পরিপন্থী বলে মনে করে।
- ইসলামী আইন ও শরিয়াহকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা ছাড়া প্রকৃত ইসলামী জীবন সম্ভব নয় বলে তারা মনে করে।
২. ইসলামী রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক মতাদর্শ
- হিযবুত তাহরীর গণতন্ত্রকে
প্রত্যাখ্যান করে এবং মনে করে, শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন কায়েম করা ছাড়া মুসলমানরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে না।
- তারা বলেছে, বর্তমান মুসলিম দেশগুলোর
সরকারগুলো ইসলামবিরোধী ও
পশ্চিমা শক্তির এজেন্ট।
- খিলাফত ব্যবস্থা
পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ দুর্বল ও
বিভক্ত থাকবে বলে তারা মনে করে।
৩. জিহাদ ও সহিংসতা নিয়ে অবস্থান
- হিযবুত তাহরীর আনুষ্ঠানিকভাবে
সশস্ত্র জিহাদে বিশ্বাস করে না এবং তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমর্থক নয় বলে দাবি করে।
- তবে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক
ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
- কিছু দেশে সংগঠনটির
বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ও সহিংসতাকে উৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে।
৪. অন্যান্য ইসলামী দল ও মাযহাব সম্পর্কে অবস্থান
- হিযবুত তাহরীর প্রচলিত চার মাযহাব (হানাফি, মালিকি, শাফি, হাম্বলি) মেনে চলে, তবে তারা সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট
মাযহাব অনুসরণ করে না।
- তারা মুসলিম ব্রাদারহুড
(ইখওয়ানুল মুসলিমিন), তাবলিগ জামাত, বা সালাফিদের মতো সংগঠনগুলোর পদ্ধতির সাথে একমত নয়।
- তারা মনে করে, অন্য ইসলামী সংগঠনগুলো
প্রকৃত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সংক্ষেপে:
- হিযবুত তাহরীরের
আকিদা ইসলামের মূল বিশ্বাসের (তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- তারা খিলাফত
প্রতিষ্ঠাকে ইসলামের ফরজ দায়িত্ব হিসেবে দেখে।
- তারা গণতন্ত্র,
জাতীয়তাবাদ, ও বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে।
- তারা সরাসরি সশস্ত্র
সংগ্রামে জড়িত নয়, তবে রাজনৈতিক ও
আদর্শগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের
মতাদর্শ নিয়ে
ইসলামী
পণ্ডিতদের মধ্যে
ভিন্নমত রয়েছে,
এবং
অনেক
দেশ
তাদের
উগ্রবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।