হোলি বা দোল উৎসব এর ইতিহাস এবং রচনা।
সুচনাঃ-
হোলি বা দোল রঙের উত্সব এটি প্রায়ই সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পূর্ণিমাতে ফাগুন পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর হোলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে মানুষ তাদের সব সমস্যা ভুলে,নতুন রঙে এবং নতুন ভাবে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে।
এই উৎসব মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়ায়। এই দিনটি ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক উৎসব, এই উৎসব শুধু হিন্দুদের উৎসব নয় এই উৎসব সর্বজনীন। বহু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হোলি উত্সব পালিত হচ্ছে এবং এর বিশেষত্ব এবং গুরুত্ব আধুনিকদিনে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হলি রং এবং প্রেমের উত্সব। প্রতিবছর হিন্দুদের দ্বারা উদযাপন করা একটি বড় উৎসব। এই দিনে প্রেম ও স্নেহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ধর্ম স্থান তথা রাম জন্মভূমি, কৃষ্ণ জন্মভূমি এই দিনে বিশেষ ভাবে পালিত হয়।
এই উৎসব মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়ায়। এই দিনটি ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক উৎসব, এই উৎসব শুধু হিন্দুদের উৎসব নয় এই উৎসব সর্বজনীন। বহু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হোলি উত্সব পালিত হচ্ছে এবং এর বিশেষত্ব এবং গুরুত্ব আধুনিকদিনে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হলি রং এবং প্রেমের উত্সব। প্রতিবছর হিন্দুদের দ্বারা উদযাপন করা একটি বড় উৎসব। এই দিনে প্রেম ও স্নেহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ধর্ম স্থান তথা রাম জন্মভূমি, কৃষ্ণ জন্মভূমি এই দিনে বিশেষ ভাবে পালিত হয়।
সাহিত্যে হোলিঃ-
প্রাচীনকালে, সংস্কৃত সাহিত্যে হোলির বিভিন্ন রূপের একটি বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। শ্রীমতভাগবতে এর বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যান্য রচনা যেমন কালিদাসের কুমারসাম্ভাবে "রঙ" উতসাব উদযাপন বর্ণনা করেছেন। এছারাও হিন্দি, বাংলা বহু সাহিত্যে হোলি উৎসবের কথা লেখা আছে। বিভিন্ন পুরানেও এই হোলি উৎসবের কথা উল্লেখ আছে যা থেকে বলা যায় যে এই উৎসব অনেক পুড়ান।
হোলি উতসবে সমাজের ভুমিকাঃ-
হোলি উত্সবে ভারতে প্রতি অঞ্চলে সুখের রঙ আনে, আনে প্রতিটি বাড়িতে, এই উত্সব সুখের রঙ দেয়, তাই এই উত্সবটি রং উত্সব বলা হয়। যেমন প্রকৃতি তার আলো, বায়ু, জল, সমস্ত জীবকে কোনও পার্থক্য ছাড়াই বিতরণ করে। অনুরূপভাবে, হোলির রংগুলি এমন কোনো বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত জীবকুলে খেলা করে। আবীরের রঙে রঙিন রং সব রঙিন হয়ে যায়। সমাজের সব জীবকুলে এমনকি সমস্ত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এই রং সবারে মধ্যে ছরিয়ে পরে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে। সমাজের উচ নিচু ভেদাভেদ মিশে যায় এই দিন সবাই রঙ্গিন এই দিন, সবাই এক রঙ্গিন, হাসিখুশি এবং সুখশান্তির দেশে চলে যায় এই দিন। তাই হোলি এক সমাতা বৃদ্ধি, ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করার উৎসব। হোলির প্রভাবে ধরনি রঙ্গিন করে তা নয় আসলে এই উৎসব মানুষের জীবনেও রং এনে রঙ্গিন করে তোলে। হোলি উপলক্ষে, বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়।
মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উদযাপন মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উতসব -
মথুরা এবং বৃন্দাবন পবিত্র স্থান যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সারা বছর ধরে এই পবিত্র জায়গায় দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক ঘুরতে আসে। কিন্তু এই সময় দোল যাত্রার সময় প্রচুর মানুষ এই পবিত্র স্থানে ঘুরতে আসে। মথুরা ও বৃন্দাবনে হোলি উৎসব বিখ্যাত এই দিন আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হয়, সাত দিন ধরে এই সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে। রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে লিলা খেলার নৃত্য হয়। জাত্রাপালার মাধ্যমে রাধা-কৃষ্ণর লিলা খেলা তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মের কাছে। রামায়নের চরিত্র এই সময় তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন প্রকারের খাবার, নৃত্য নতুন পোশাক রং মাখা গোটা শহর কিছুটা অন্য রকম। হাসি-খুশিতে কেটে যায় এই সাতদিন। আর এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য এই দিনে মানুষ ভারতের অন্যান্য শহর থেকে মথুরা এবং বৃন্দাবনে আসে।
শান্তি নিকেতনে হোলি উৎসবঃ-
শান্তি নিকেতনে হোলি খুব ধুমধামের সহিত পালন করা হয়। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষিকা সবাই মিলে এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করে। রং দিয়ে সবাই রঙ্গিং হয়ে যায়। এই স্থানে সাধারনত রঙের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় না, কিন্তু আবির এর প্রাধান্য বেশি হয় তাই এই দিনে বিভিন্ন ধারনের আবিরের দেখা মেলে এখানে। শান্তিনিকেতনের মাটি বাতাস রঙে রঙ্গিন হয়ে যায়। বিদেশ থেকেও এই দিন পর্যটক আশে শান্তিনিকেতনে। কবি গুরুর গান আকাশ বাতাস মুগ্ধ করে এই দিন।
ফ্লিমে হোলি উৎসবের ভুমিকাঃ-
ফ্লিমেও হোলির প্রাধান্য দেখা যায়। হিন্দি, বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন ভাষার ফিল্মে রং উৎসবের ছোঁয়া দেখা যায়। "রং বরছে" হিন্দি গান যা কালজয়ি হয়ে আছে। "খেলব হোলি রং দেবনা" বাংলা গান যা প্রতি বছর হোলি উৎসবের সময় শোনা যায়। এছাড়াও কবি, লকসঙ্গিতেও হোলির প্রাধান্য দেখা যায়।
পুরান মতে এর গুরুত্বঃ-
এই উত্সবে অনেক অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়, পরিবারের সব সদস্য এবং আত্মীয় একসাথে হোলিকা পুড়িয়ে দেয় এবং হোলি দিবসের পালন করে। এই হোলিকার মৃত্যু এবং প্রতিবছর সে উপলক্ষে হোলিকা পুড়ান হোলির রং খেলার সঙ্গে জরিত। আমাদের উৎসবগুলির প্রাচীন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এটি বলা হয় যে প্রাচীনকালে হিরণ্যকশিপ নামের একটি রাজা ছিলেন। তিনি নিজেই প্রজাদের কাছে নিজেকে ঐশ্বরিক বলে ডাকতে বাধ্য করতেন, এবং বলতেন যে, যে তাকেই(রাজা হিরণ্যকশিপ) কেবলমাত্র পূজা করা উচিত। দরিদ্র লোকেরা ভয় করত এবং তার পূজা করতে লাগল ইশরের মত। তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ - যিনি ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। ভগবান বিষ্ণু ছাড়া অন্য কোন দেবতাকে তিনি মানতেন না। কিন্তু তার পিতা রাজা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণু বিরধিতা ছিলেন। হিরণ্যকশিপু তাঁর পুত্রের এই বিষ্ণু ভক্তি সহ্য করতে পারলেন না এবং তাঁর পুত্রকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন। একদিন তার বোন হোলিকার সঙ্গে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন, কেননা তিনি জানতেন যে হোলিকাকে আগুল পুরতে পারবে না। তাই তিনি দুজনকেই জ্বালান্ত আগুনে ফেলে দিলেন। কিন্তু সব উল্টো হয়ে গেলে তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ বেচে গেলেন কিন্তু হোলিকা আগুনে পুরে গেলেন। এখানে একটা কথা স্পস্ট ছিল যে জার মনে খোপ থাকবে সে পুরে যাবে কিন্তু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন এক কঠর ভগবান বিষ্ণু ভক্ত তাই তার কিছু হয় নি, কেউ কেউ মনে করে যে এর থেকেই হোলি নাম হয়েছিল এবং হলির দিন হোলিকাকে পোরান হয়। হোলিকাকে পোড়ানোর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি অনুসরণ করে যে কেউ, তার জীবনের সমস্ত নেতিবাচক বিষয়গুলি দূর করে এবং একটি ইতিবাচক কাজ শুরু করে।
উপসংহারঃ-
হোলি প্রেম এবং পারস্পরিক শুভেচ্ছা একটি উত্সব সমাজে দেখা যায় যা একতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে। সবাই হাসে, এবং প্রত্যেক মানুষ হোলির রং পায়। পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের রং মিলে মিশে যায়। মানুষ সবার সাথে সবাই সখ-শান্তি ভোগ করে নেয়। বন্ধু, হোলি একটি পবিত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত সুখের উত্স। আসুন সবাই একসঙ্গে এই উত্সবের মর্যাদা রাখি এবং আনন্দে এই উত্সব উদযাপন করি। সুখশান্তি সবাই মিলে ভাগ করে নেই এবং হোলির রঙ্গে সবাই রঙ্গিন হই।
ধন্যবাদ।
"আসুন ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে হিন্দু ধর্মের অপপ্রচার বন্ধ করি এবং সত্যকে উদ্ঘাটন করি"
প্রচারে: বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ সোসাইটি (বিএসকেএস)
শুভেচ্ছান্তে শ্রী সুমন ঘোষ
কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সদস্য ও
সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট বিভাগ।
বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ সোসাইটি ।