সেকেন্ড রিপাবলিক মানে কি।দ্বিতীয় রিপাবলিক মানে কি

সেকেন্ড রিপাবলিক মানে কি

সেকেন্ড রিপাবলিক (Second Republic) বলতে সাধারণত একটি দেশের দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। এটি সাধারণত তখন ব্যবহৃত হয় যখন প্রথম প্রজাতন্ত্র কোনো কারণে ভেঙে যায়, পরিবর্তিত হয়, বা কোনো নতুন সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে পুনর্গঠিত হয়।


বিভিন্ন দেশে "সেকেন্ড রিপাবলিক" ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ফ্রান্সের সেকেন্ড রিপাবলিক (1848-1852): ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের পর ফ্রান্সের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, কারণ ১৮৫২ সালে লুই-নেপোলিয়ন বোনাপার্ট স্বীয় ক্ষমতা সুসংহত করে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন।
  • স্পেনের সেকেন্ড রিপাবলিক (1931-1939): ১৯৩১ সালে রাজতন্ত্র পতনের পর স্পেনে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে ১৯৩৯ সালে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের পর এটি ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্বৈরাচারী শাসনে রূপ নেয়।
  • নাইজেরিয়ার সেকেন্ড রিপাবলিক (1979-1983): সামরিক শাসনের পর নাইজেরিয়ায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে "সেকেন্ড রিপাবলিক" বলা হয়।
  • সংক্ষেপে, সেকেন্ড রিপাবলিক হলো একটি দেশের দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যা সাধারণত রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আসে।

দ্বিতীয় রিপাবলিক মানে কি

অনেকেই দ্বিতীয় রিপাবলিক গঠন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন এবং জানতে চেয়েছেন, এটি আবার কী? যাঁরা এমনটি ভাবছেন, তাঁদেরকে বিনীতভাবে বলব, দয়া করে ফ্রান্সের ইতিহাস পড়ুন। তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বর্তমানে ফ্রান্সে পঞ্চম রিপাবলিক পিরিয়ড চলছে। চলুন, ফ্রান্সের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:

১. ফরাসি রাজতন্ত্র এবং ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯-১৭৯৯):
১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফ্রান্স ছিল একটি রাজশাসিত রাষ্ট্র। তবে ১৭৮৯ সালে শুরু হওয়া ফরাসি বিপ্লবের পর সাধারণ জনগণ রাজতন্ত্রকে পরাজিত করে। বিপ্লব চলাকালীন, ১৭৯২ সালে ফ্রান্সকে প্রথম রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে, এই প্রথম রিপাবলিকটি বেশি সময় স্থায়ী হয়নি এবং এর মেয়াদ ছিল ১৭৯২ থেকে ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

২. স্বৈরতন্ত্রের পুনরুদ্ধার (১৮০৪-১৮৪৮):
১৮০৪ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশটি আবার রাজতন্ত্রের অধীনে চলে যায়। এই অস্থিতিশীল রাজতন্ত্র ১৮৪৮ পর্যন্ত চলতে থাকে।

৩. দ্বিতীয় রিপাবলিক (১৮৪৮-১৮৫২):
১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এই পর্বও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং মাত্র চার বছর পর, ১৮৫২ সালে ফ্রান্স আবার স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে। এই সময়কার শাসক ছিলেন নেপোলিয়ন তৃতীয়, যিনি ফ্রান্সকে দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে শাসন করেন।

৪. তৃতীয় রিপাবলিক (১৮৭০-১৯৪০):
১৮৭০ সালে ফ্রান্সে তৃতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৪০ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৯৪০ সালে, জার্মানি ফ্রান্সকে দখল করে নেয় এবং দেশটি চার বছরের জন্য জার্মানির অধীনে থাকে। ১৯৪৪ সালে জার্মানির কাছ থেকে মুক্তির পর, ফ্রান্সে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শাসন পরিচালনা করে।

৫. চতুর্থ রিপাবলিক (১৯৪৬-১৯৫৮):
১৯৪৬ সালে ফ্রান্সে চতুর্থ রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এটি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারেনি। ১৯৫৮ সালে ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলে, জেনারেল দ্যাগল শাসনভার গ্রহণ করেন এবং পঞ্চম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করেন।

৬. পঞ্চম রিপাবলিক (১৯৫৮ থেকে বর্তমান):
১৯৫৮ সালে পঞ্চম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় থেকেই ফ্রান্সে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে এবং দেশটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ফ্রান্স পৃথিবীর অন্যতম সেরা কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত।

নতুন রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করার মানে হলো, অতীতের সংকট ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিত্যাগ করে নতুন স্বপ্ন এবং আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সাজানো। এর মাধ্যমে একটি দেশ তার ভবিষ্যত নির্ধারণের পথ খুলে দেয়।

Post a Comment