প্রেমের কবিতা বাংলা সাহিত্যের এক অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত শাখা, যা যুগে যুগে পাঠকের হৃদয়কে আন্দোলিত করে এসেছে। প্রেম—এই অনুভূতিটি মানুষকে যেমন আলোড়িত করে, তেমনি কবির কণ্ঠে তা হয়ে ওঠে এক শিল্পসুষমা। কবিতার মাধ্যমে প্রেমের আনন্দ, বেদনা, প্রত্যাশা, অপূর্ণতা কিংবা বিচ্ছেদের হাহাকার অসাধারণভাবে ফুটে ওঠে।
প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা কবিতায় প্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলীতে কৃষ্ণ-রাধার প্রেম যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি আধুনিক কালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেমকে এক গাম্ভীর্য ও রূপক সৌন্দর্যে রূপ দিয়েছেন। তাঁর কবিতায় প্রেম শুধু মানসিক আকর্ষণ নয়, আত্মিক মিলনের রূপও ধারণ করেছে। "তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম" — এই পঙ্ক্তিতে যে প্রেমের নিঃশব্দ কিন্তু গভীর স্রোত বইছে, তা চিরকালীন।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবিতায় বিপ্লবী স্পর্শ এনেছেন। তাঁর প্রেম উদ্দাম, ছন্দময়, আর কখনো কখনো বেদনাবিধুর। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রেম যেন এক অলৌকিক স্বপ্নের মতো, স্মৃতি আর নিঃসঙ্গতার ছায়ায় ঘেরা।
আধুনিক কবিতায় প্রেম এসেছে নতুন ভাষা ও অনুভব নিয়ে। নতুন প্রজন্মের কবিরা শহুরে জীবন, প্রযুক্তির জটিলতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন—সবকিছু মিলিয়ে প্রেমকে প্রকাশ করছেন নতুনভাবে।
সবশেষে বলা যায়, প্রেমের কবিতা মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে কোমল অনুভূতিকে ভাষা দেয়, যা সময়ের সাথে বদলায়, কিন্তু তার আবেদন চিরন্তন থাকে। প্রিয় পাঠক আজ আমরা পড়বো বাংলা সাহিত্যের সেরা প্রেমের কবিতাগুলো। যদি আপনার পছন্দের কোন লেখা মিসটেক হয় কমেন্ট করে জানাবেন।
কাজল চোখের মেয়ে
সাদাত হোসাইন
শোনো, কাজল চোখের মেয়েআমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে
তোমার চোখে চেয়ে।
দহনের দিনে, কিছু মেঘ কিনে
যদি ভাসে মধ্য দুপুর
তবু মেয়ে জানে, তার চোখ মানে
কারো বুক পদ্মপুকুর।
এই যে মেয়ে, কজল চোখ
তোমার বুকে আমায় চেয়ে
তীব্র দাবির মিছিল হোক।
তাকাস কেন?
আঁকাস কেন, বুকের ভেতর আকাশ?
কাজল চোখের মেয়ে
তুই তাকালে থমকে থাকে
আমার বুকের বাঁ পাশ।
অনেক ছিল বলার
কাজি নজরুল ইসলাম
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
নিঃসঙ্গতা
আবুল হাসান
অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী
চিঠি দিও
মহাদেব সাহা
করুণা করেও হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিওআঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখি প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি
চুলের মতন কোন চিহ্ন দিও বিষ্ময় বোঝাতে যদি চাও।
সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল পাখি, সবুজ পাহাড়
বর্ণনা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দাও।
আজোতো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে।
এক কোনে শীতের শিশির দিও এক ফোঁটা, সেন্টের শিশির চেয়ে
তৃনমূল থেকে তোলা ঘ্রাণ
এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল!
ওইতো রাজার লোক যায় ক্যাম্বিসের জুতো পায়ে, কাঁধে ব্যাগ,
হাতে কাগজের একগুচ্ছ সীজন ফ্লাওয়ার
কারো কৃষ্ণচূড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোঁপ, কারো নিবিড় বকুল
এর কিছুই আমার নয় আমি অকারণ
হাওয়ায় চিৎকার তুলে বলি, আমার কি কোনো কিছু নেই?
করুনা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তুব লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোটো নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোনো দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড়ো একা লাগে, তাই লিখো
করুণা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করেও হলে বলো, ভালোবাসি।
যাত্রাভঙ্গ
নির্মলেন্দু গুন
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকেমন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।
তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।
নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত
তসলিমা নাসরীন
ভূল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবুএখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়-
প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে
পাথর শরীর বেয়ে ঝরনায় জল ঝরে।
এখন কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি।
নির্জন বৈশাখ, মাঘ-চৈত্রে-
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি।
প্রতারক পুরুষেরা এবার ডাকালেই
ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী
ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না ফুরানো দীর্ঘ রাত।
একবার ডাকলেই
সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে।
একবার ভালোবাসলেই
সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।
ভুলে প্রেমে তিরিশ বছর গেল
সহস্র বছর যাবে আরো, তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।
সে
জীবনানন্দ দাস
আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;বলেছিলোঃ 'এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল;
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।'
'এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?'
মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।
সময়ের অবিরল শাদা আর কালো
বনানীর বুক থেকে এসে
মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক - তবু চোখ ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।
আকাশলীনা
জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে - আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস -
আকাশের ওপারে আকাশ।
ভালো আছি ভালো থেকো
রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরেআছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলে ঘুম
তেম্নি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মুল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ
তেম্নি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি
বাউল এ মনটারে।
কেউ কথা রাখেনি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল,যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে।
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ
নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা
নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুনা, এখন তার বুকে শুধুই
মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ
কথা বলেনি।
এই টুকুইতো
চৌধুরী কামরুল আহসান
এইটুকুইতো চেয়েছি, ছোট এক দ্বীপ হতে
বিশাল সাগরের বুকে
অথবা তুমি যদি মিষ্টি করে হাসো
ছোট্র এক তিল হই তোমার চিবুকে।
ভালবাসার সংজ্ঞা
রফিক আজাদ
ভালোবাসা মানে দু’জনের পাগলামি,পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;
ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,
বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাটি;
ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি
খুব করে ঝুঁকে থাকা;
ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা
ভিতরে- বাহিরে দু’জনের হেঁটে যাওয়া;
ভালোবাসা মানে ঠান্ডা কফির পেয়ালা সামনে
অবিরল কথা বলা;
ভালোবাসা মনে শেষ-হয়ে-যাওয়া কথার পরেও
মুখোমুখি বসে থাকা।
ফিরে যাবে তা কেন হবে
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে?আমি ঘরে আছি, ঘর পর্যন্ত তোমাকে পৌছুতেই হবে
ভয় নেই জেগে আছি
শব্দ পেলেই দরজা খোলে দেবো
সিঁড়ি ফেলে দেবো।
তুমি চলে এসো নিরাপদে।
এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে? তা হয় না।
কান তুলে ব'সে আছি
সামান্য শব্দ পেলেই বুকের ভেতর লাফিয়ে উঠে মাছরাঙা
ঘুড়ির মতো পাক খেয়ে বিছানা থেকে নেমে
বারান্দায় আসি-ওই তুমি এলে?
কাক ডাকলে, টিকটিকি টকটক করলে
রাস্তার মোড়ে জোরে হর্ণ বাজলে
দমকা বাতাসে ঘরের পর্দা দাপাদাপি করলে
আমি আরো শান্ত হ'তে চাই
ভাবি, এখনো সময় আছে!
এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে?
তুমি কি এসে সারাশব্দ না পেয়ে ফিরে গেছো?
নাকি দারুণভাবে কোথাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছো
কিংবা শরীর খারাপ-আসতে পারছো না,
না হ'তে পারে না,
এসে ফিরে যাবে তা হতে পারে না।
তুমি যদি
চৌধুরী কামরুল আহসান
তুমি যদি রাধাচূড়া হও
আমি মাটি হবো,
ভালোবাসার শেকড় আমার বুকে
ছড়িয়ে দেবে তুমি,
তোমাকে ধারন করে আজীবন।
আমার নির্যাস নিয়ে
ফুলে ফুলে ভরে উঠবে তোমার দেহ,
কখনো এক কোকিল এসে বসবে তোমার ডালে,
আমি তাকিয়ে থাকবো অপলক
তুমি না হয় নাই তাকালে!
প্রথম প্রেমিকা
বিজয় মাখাল
যে আজ আঙুল নামিয়েছে জলে, জেনো, সে আমার প্রথম প্রেমিকা।আমি ওর স্বপ্নে ও অশ্রুর মধ্যে শুয়ে থাকি নি:শব্দ ঝিনুক হয়ে
চিরদিন-চিরদিন আমি তার অবৈধ খেলার সাথী; গোপন সুখ তার
একে একে আমিই ভেঙেছি। ও বালিকা তবুও কিছুই বোঝেনি।
যে আজ আমার আঙুল নামিয়েছে জলে, এত ভোরে,
অকারনে তার চারপাশে
ইতিউতি ঘুরে গেছে শিমুলের ফুল
ও বালিকা তবু কিছুই বোঝেনি।
শুধু তোমারই জন্যে
রথীন ভৌমিক
আমি শীতের কাছে প্রার্থনা করি সারারাত
সারাদিনমান
কেবল তোমারই জন্যে
কেবল তোমারই জন্যে
এই প্রিয় অরন্যের কাছে
এই প্রিয় সমুদ্রের কাছে
এই অবেলায়
এত নির্জনতা
তোমার পায়ের শব্দে ঘর ভিজে যায়
কোথায় দাঁড়াবো
তবু আমি
জিজ্ঞেস করো না কখনো
কেন আসি।
তোমায় কখনো ভুলতে পারবো না আলেকজান
- ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিম
তোমায় কখনো ভুলতে পারবো না আলেকজান,
তুমি যদি সহস্র পুরুষের স্ত্রী হও
তুমি যদি সহস্র সন্তানের মা হও
তুমি যদি সহস্র বয়সের বৃদ্ধা নারী হও
তবুও তোমায় ভুলতে পারবো না।
শতবার বলেছি তোমায় ভুলে যাবো
কিন্তু লক্ষবার তোমার প্রেমে পড়ি,
যতবার ওয়াদা করি ততবার ভঙ্গ করি।
ওয়াদা,অঙ্গীকার, ধর্ম-কর্ম সব যেন তোমার কাছে তুচ্ছ।
হে আলেকজান
আমার মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করো,
তোমায় ভুলে থাকার কষ্টে
বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি
তুমি ছাড়া কোন নারী আমার স্বর্গ নয়
সবাই আমার কাছে নরক....
তুমি যদি সহস্র পুরুষের স্ত্রী হও
তুমি যদি সহস্র সন্তানের মা হও
তুমি যদি সহস্র বয়সের বৃদ্ধা নারী হও
তবুও তোমায় ভুলতে পারবো না।
শতবার বলেছি তোমায় ভুলে যাবো
কিন্তু লক্ষবার তোমার প্রেমে পড়ি,
যতবার ওয়াদা করি ততবার ভঙ্গ করি।
ওয়াদা,অঙ্গীকার, ধর্ম-কর্ম সব যেন তোমার কাছে তুচ্ছ।
হে আলেকজান
আমার মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করো,
তোমায় ভুলে থাকার কষ্টে
বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি
তুমি ছাড়া কোন নারী আমার স্বর্গ নয়
সবাই আমার কাছে নরক....
বিভ্রম
সমুদ্র গুপ্ত
চমৎকার তিল দেখে
হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই
তোমার গাল থেকে
উড়ে গেল মাছি।
অস্তিত্ব
খড়কুটো হয়ে আমি
বাতাসে কিংবা স্রোতে,
শেওলার মতো
ভেসে
ভেসে
ভেসে...........
র'বো তোমার পাশে।
ব্যথা দাও, বুকে রাখবো
ব্যথার জন্যই তো হৃদয়
আঘাতে বুক ভাঙবে না
বুকে ব্যথা আছে।
গলিত লাভাগুলো বেদনার
যেন ঘনীভূত পাথরের দেহ
আঘাতে পাথর কখনো গলে না
গলে না হৃদয়।
পাহাড়ে ধস নামলে কখনো
মাটি অনায়াসে পেতে দেয় বুক।
তুমি যাবতীয় দুঃখকে ছুঁড়ে দাও
আমি বুক পেতে নেবো
বুক ভাঙবে না।
দুয়ার বন্ধ করলেই
আমি ফিরে যাবো নির্বিকার,
অস্বীকার করো মেনে নেবো।
এ্যালবামে স্মৃতি নেই বলে
আদৌ দুঃখ করি না,
সোনালি নিঃসঙ্গতায় আমার
বিচিত্র দুঃখের সমাবেশ সঞ্চয় ।
ব্যথা দাও, বুকে রাখবো
ব্যথায় ভাঙবে না বুক
বুকে ব্যথা আছে ।
নর-নারী
সব বয়সে নারী বয়সহীনা
পুরুষ মানে আর কিছু নয়
তাগড়া তাজা সিনা
জড়াই কিংবা গড়াই
ভালোবাসা খুব কিছু নয়
দুই শরীরের লড়াই;
জড়াই কিংবা গড়াই
ভালোবাসা তোমার আমার
জীবনজোড়া বড়াই।
সমুদ্র গুপ্ত
চমৎকার তিল দেখে
হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই
তোমার গাল থেকে
উড়ে গেল মাছি।
অস্তিত্ব
নাসিম আনোয়ার
খড়কুটো হয়ে আমি
বাতাসে কিংবা স্রোতে,
শেওলার মতো
ভেসে
ভেসে
ভেসে...........
র'বো তোমার পাশে।
ব্যথা দাও, বুকে রাখবো
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
ব্যথা দাও, বুকে রাখবো
ব্যথার জন্যই তো হৃদয়
আঘাতে বুক ভাঙবে না
বুকে ব্যথা আছে।
গলিত লাভাগুলো বেদনার
যেন ঘনীভূত পাথরের দেহ
আঘাতে পাথর কখনো গলে না
গলে না হৃদয়।
পাহাড়ে ধস নামলে কখনো
মাটি অনায়াসে পেতে দেয় বুক।
তুমি যাবতীয় দুঃখকে ছুঁড়ে দাও
আমি বুক পেতে নেবো
বুক ভাঙবে না।
দুয়ার বন্ধ করলেই
আমি ফিরে যাবো নির্বিকার,
অস্বীকার করো মেনে নেবো।
এ্যালবামে স্মৃতি নেই বলে
আদৌ দুঃখ করি না,
সোনালি নিঃসঙ্গতায় আমার
বিচিত্র দুঃখের সমাবেশ সঞ্চয় ।
ব্যথা দাও, বুকে রাখবো
ব্যথায় ভাঙবে না বুক
বুকে ব্যথা আছে ।
নর-নারী
মুহম্মদ নূরুল হুদা
সব বয়সে নারী বয়সহীনাপুরুষ মানে আর কিছু নয়
তাগড়া তাজা সিনা
জড়াই কিংবা গড়াই
ভালোবাসা খুব কিছু নয়
দুই শরীরের লড়াই;
জড়াই কিংবা গড়াই
ভালোবাসা তোমার আমার
জীবনজোড়া বড়াই।
ভালোবাসা
- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
যাদের আছে টাকা
সবাইকে দিতে তাদের পকেট হল ফাঁকা।
আমার কিছুই নেই
কেমন করে কাউকে কিছু দেই?
শুধু জানি বুকের ভিতর ঠাসা
আছে শুধু সলিড ভালোবাসা।
সেখান থেকে তোমায় দিলাম কিছু
যখন তুমি হেঁটে এলে আমার পিছু পিছু।
পথের পাশে ছোট মেয়েটা বিক্রি করে ফুল
তাকেও কিছু দিতে হল হয়নি কোনো ভুল।
বুকের থেকে ভালোবাসা খাবলা দিয়ে নেই
ছোট ভাইটা দুষ্টু ভারি তাকে কিছু দেই।
মা’কে দিলাম আঁচলখানা ভরে
বাবার জন্য ঢেলে দিলাম রইল যেটুক পড়ে।
ভেবেছিলাম দিয়ে থুয়ে সবই বুঝি যাবে
ভালোবাসা খুঁজলে পরে আর কিছু কই পাবে?
কিন্তু দেখো অবাক ব্যাপার কতো
যত দিচ্ছি কমছে না তো,বাড়তে থাকে তত!
বুকের ভেতর এক্কেবারে ঠাসা
নূতন করে জমা হল সলিড ভালোবাসা।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
- আনিসুল হক
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচণ্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুড়ে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
বাসর
- হুমায়ূন আহমেদ
কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা ।
লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর ।
বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই ।
ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে ।
নামছে আর উঠছে ।
মানুষ ক্লান্ত হয় –
এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই।
এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল ।
নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর ।
কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না ।
হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো। পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে ।
পুণ্য আনন্দহীন । উল্লাসহীন ।
পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা ।
কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে ।
লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো ।
সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন, কি হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন ?
আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো।
ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো ।
বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল ?
তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে ।
ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে ।
আমি তাকে বলতে গেলাম - আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না
এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর ?
আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা ।
যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন
ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে ।
আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন । দয়া করে কিছু বলবেন না ।
ভালো থেকো
- হুমায়ুন আজাদ
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।
ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।
ভালো থেকো।
ভালো থেকো চর, ছোট কুড়ে ঘর, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো পাতা, নিশির শিশির।
ভালো থেকো জল, নদীটির তীর।
ভালো থেকো গাছ, পুকুরের মাছ, ভালো থেকো।
ভালো থেকো কাক, কুহুকের ডাক, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মাঠ, রাখালের বাশিঁ।
ভালো থেকো লাউ, কুমড়োর হাসি।
ভালো থেকো আম, ছায়া ঢাকা গ্রাম, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ঘাস, ভোরের বাতাস, ভালো থেকো।
ভালো থেকো রোদ, মাঘের কোকিল,
ভালো থেকো বক, আড়িয়ল বিল,
ভালো থেকো নাও, মধুমতি গাও,ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।
ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো।