বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ
বুকে গ্যাস জমা মানে হচ্ছে পাকস্থলীতে বা খাদ্যনালিতে অতিরিক্ত গ্যাস বা বাতাস জমে যাওয়া, যা অনেক সময় বুকে চাপ বা ব্যথার অনুভূতি তৈরি করে। অনেক সময় এই উপসর্গ হার্টের সমস্যার সঙ্গে মিলেও যেতে পারে, তাই সচেতন থাকা দরকার।
এখানে বুকে গ্যাস জমার সাধারণ লক্ষণগুলো দেওয়া হলো:
১. বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব
- বুকের মাঝখানে বা উপরের দিকে ভারী চাপ লাগতে পারে।
- অনেক সময় এটা জ্বালাপোড়ার মতোও অনুভূত হয় (যাকে আমরা হার্টবার্ন বলি)।
২. ঢেঁকুর ওঠা (Burping)
- অতিরিক্ত গ্যাস হলে বারবার ঢেঁকুর ওঠে।
- ঢেঁকুরের মাধ্যমে গ্যাস কিছুটা বেরিয়ে গেলে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায়।
৩. পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি
- পেট ফাঁপা, টাইট লাগা, বা পেট ভারী মনে হতে পারে।
- কখনও বুকেও টান টান অনুভূতি হয়।
৪. বুক ধড়ফড় বা গ্যাসের কারণে প্যালপিটেশন
- কখনও কখনও গ্যাস চাপ পড়লে বুক ধড়ফড় করতে পারে, যদিও হার্টের প্রকৃত সমস্যা নয়।
৫. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- অতিরিক্ত গ্যাস বুকের ওপর চাপ দিলে হালকা শ্বাসকষ্টের মতো মনে হতে পারে।
৬. পেটে বা বুকে ব্যথা
- বাম বা ডান দিকে, মাঝখানে, অথবা বুক থেকে পেটে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা হতে পারে।
৭. ক্ষুধামন্দা বা অরুচি
- গ্যাস জমলে অনেক সময় খেতে ইচ্ছে করে না।
- খাবারের পরে অস্বস্তি বাড়ে।
৮. বদহজম এবং অম্লতা (Acidity)
- অনেক সময় গ্যাসের সঙ্গে হজমের সমস্যা থাকে।
- খাবার হজম না হওয়া বা খাবারের পর ভারী মনে হওয়া।
৯. টক ঢেঁকুর বা মুখে অম্ল স্বাদ
- পাকস্থলী থেকে টক গ্যাস বা অ্যাসিড উপরে উঠে এলে মুখে টক স্বাদ লাগতে পারে।
১০. ক্লান্তি এবং অস্বস্তি
- গ্যাসের চাপের কারণে দেহে ক্লান্তি আসতে পারে।
- কাজকর্মে মন বসে না।
বিশেষ লক্ষণ (যখন সতর্ক হবেন)
- যদি বুকের ব্যথা বাঁ কাঁধ, গলা বা হাতে ছড়িয়ে পড়ে।
- যদি ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘুরানোর সঙ্গে হয়।
- যদি বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমে।
- অতিরিক্ত দুর্বলতা বা জড়তা অনুভব করেন।
এই ধরনের লক্ষণ থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ অনেক সময় গ্যাসের ব্যথা আর হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা আলাদা করা কঠিন হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের ব্যথা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না, কারণ এই ব্যথা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি আপনাকে খুব বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছি, যেন পরিষ্কার বোঝা যায়।
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের ব্যথা সাধারণত শরীরের যেসব জায়গায় হয়:
১. উপরের পেট বা পাকস্থলীর ওপরের অংশ (Epigastric region)
- এটি গ্যাস্ট্রিকের সবচেয়ে সাধারণ জায়গা।
- পেটের মাঝখানে, বুকের ঠিক নিচে, যেখানে পাকস্থলী অবস্থিত।
- পোড়ার মতো জ্বালাপোড়া, চাপ, বা ভারী লাগা অনুভূত হতে পারে।
২. বুকের মাঝখানে বা বুকের একটু ওপরে (Chest discomfort)
- বুকের মাঝামাঝি বা নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে।
- অনেক সময় গ্যাস বুক পর্যন্ত উঠে গিয়ে চাপ বা জ্বালাপোড়া তৈরি করে, যাকে অনেকে হার্ট অ্যাটাক ভেবে ভুল করেন।
৩. ডান দিকের পেট বা ডান উপরের পেট (Right upper abdomen)
- যকৃৎ ও গলব্লাডারের আশপাশে গ্যাস জমলে এখানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- কখনো কখনো এটি ডান কাঁধ পর্যন্তও ছড়িয়ে যেতে পারে।
৪. বাম দিকের পেট বা বাম উপরের পেট (Left upper abdomen)
- পাকস্থলীর বাম পাশে গ্যাস জমলে ব্যথা হয়।
- এটি বাম কাঁধ বা বুকের বাম পাশে ছড়িয়ে যেতে পারে।
৫. পাঁজরের নিচে (Under the rib cage)
- গ্যাস জমে পাঁজরের নিচে টান ধরার মতো ব্যথা দিতে পারে।
- বিশেষ করে ডান বা বাম দিকে বেশি অনুভূত হয়।
৬. পেছনে (Back pain)
- অনেক সময় গ্যাসের ব্যথা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
- সাধারণত বুকের মাঝামাঝি বা পিঠের ওপরের দিকে টান টান লাগা অনুভব হয়।
৭. তলপেট (Lower abdomen)
- গ্যাস নিচের দিকে সরলে তলপেটে ব্যথা বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- বিশেষ করে পেট ফাঁপা বা ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
৮. বুক ধড়ফড় বা অস্বস্তি
- গ্যাসের কারণে হার্টের আশপাশে চাপ পড়লে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
- যদিও এটা আসলে হার্টের সমস্যা নয়।
ব্যথার প্রকৃতি কেমন হয়?
- জ্বালাপোড়া: অ্যাসিডের জন্য পুড়ছে বা পোড়ার মতো লাগে।
- চাপ: ভারী বা চাপা অনুভূতি হয়।
- টান ধরা: কখনো পাঁজরের নিচে বা পিঠে টান পড়ার মতো ব্যথা।
- বুক ধড়ফড়: গ্যাসের কারণে বুকের মধ্যে অস্বস্তি বা ধড়ফড়।
বিশেষ সতর্কতা:
গ্যাসের ব্যথা এবং হার্টের ব্যথা অনেক সময় মিলে যায়। যদি ব্যথার সঙ্গে এই লক্ষণ থাকে, তাহলে সতর্ক হবেন:
- ঘাম হওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- মাথা ঘোরা
- বুকের ব্যথা কাঁধ বা হাতে ছড়িয়ে পড়া
- বিশ্রামেও ব্যথা না কমা
এমন হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।