দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা।রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক দুধ আমরা কম বেশি সবাই খাই। কিন্তু আমরা দুধের কি ভালো-মন্দ দিক জানি? চলুন আজকে দুধ বিজয়ে জানবো।

দুধের উপকারিতা

১. উচ্চ পুষ্টিমান

দুধ হচ্ছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, পটাসিয়াম, ও ফসফরাসের দারুণ উৎস। এগুলো হাড়, দাঁত, পেশি, ও রক্তস্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি।

২. হাড় ও দাঁত মজবুত করে

দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় গঠন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে। বয়স্কদের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধেও দুধ উপকারী।

৩. উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে

দুধে আছে 'কমপ্লিট প্রোটিন', অর্থাৎ এমন সব অ্যামিনো অ্যাসিড যা শরীরের প্রয়োজন এবং খাদ্য থেকেই পাওয়া লাগে।


৪. উচ্চ শক্তি দেয়

দুধে থাকা কার্বোহাইড্রেট (ল্যাকটোজ), প্রোটিন ও ফ্যাট শরীরকে দ্রুত শক্তি জোগায়।

৫. ত্বকের যত্নে সহায়ক

অনেক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে দুধ ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে দুধ ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে, কোমল রাখে।

৬. হজমে সহায়ক (যদি সহ্য হয়)

দুধে থাকা কিছু এনজাইম হজমে সহায়তা করতে পারে, বিশেষত দই বা ফার্মেন্টেড ডেইরি পণ্য খেলে হজমের সমস্যা কমে।

দুধের অপকারিতা

১. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স সমস্যা

অনেকের শরীরে ল্যাকটোজ হজম করার জন্য যথেষ্ট ল্যাক্টেজ এনজাইম থাকে না। ফলে দুধ খেলেই পেটে গ্যাস, ফাঁপা, ডায়রিয়া, বা অস্বস্তি হয়।

২. অ্যালার্জির কারণ হতে পারে

বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দুধের প্রোটিন (কেসিন বা ওয়ে) অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বা পেটে সমস্যা হতে পারে।

৩. হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি

শিল্পোৎপাদিত দুধে অনেক সময় অতিরিক্ত হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

৪. ওজন বৃদ্ধি ও হৃদরোগের ঝুঁকি

সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ অতিরিক্ত গ্রহণ করলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে ওজন বৃদ্ধি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৫. মিউকাস বা কফ সৃষ্টি

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দুধ খেলে গলা ও নাকের মিউকাস বেড়ে যেতে পারে, যদিও এ বিষয়ে গবেষণা মিশ্র।

রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

১. ভালো ঘুমে সহায়ক

দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান (Tryptophan) ও মেলাটোনিন, যা ঘুমের হরমোন। রাতে এক গ্লাস গরম দুধ শরীরকে শিথিল করে ও ঘুম আসতে সাহায্য করে।

২. পাচন ব্যবস্থায় উপকারী

রাতে দুধ খেলে হজম প্রক্রিয়া ধীরে ও স্থিরভাবে চলে, ফলে রাতভর শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং হজম প্রক্রিয়া ভারসাম্য থাকে।

৩. মাংসপেশি মেরামতে সহায়ক

ঘুমের সময় শরীর নিজেকে পুনর্গঠন করে। দুধে থাকা প্রোটিন (বিশেষ করে কেসিন) ধীরে ধীরে হজম হয়, যা মাংসপেশি মেরামতে সহায়তা করে।

৪. হাড় মজবুত করে

রাতে দুধ পান করলে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শরীরে ভালভাবে শোষিত হয়, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

৫. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে

রাতে এক গ্লাস দুধ খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, অতিরিক্ত ক্ষুধা বা রাতের মধ্যে খাওয়ার প্রবণতা কমে।

রাতে দুধ খাওয়ার অপকারিতা

১. পাচনতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে

যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাদের ক্ষেত্রে রাতে দুধ খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে।

২. ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি

রাতে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে তা হজমের বদলে চর্বি আকারে জমা হতে পারে। বিশেষ করে যদি দুধের সঙ্গে চিনি বা অন্য মিষ্টি যোগ করা হয়।

৩. অতিরিক্ত মিউকাস সৃষ্টি

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রাতে দুধ খেলে গলা ভারী বা কফ জমার অনুভূতি হয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৪. অ্যাসিডিটির সমস্যা

যদি আগে থেকেই অ্যাসিডিটির প্রবণতা থাকে, তাহলে রাতে দুধ খেলে কিছু মানুষের অস্বস্তি হতে পারে।

উপসংহার

দুধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য, তবে সব মানুষের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। শরীরের অবস্থা ও সহনশীলতা অনুযায়ী দুধ পান করা উচিত। যাদের দুধে অস্বস্তি হয়, তারা বিকল্প হিসেবে বাদামের দুধ (আলমন্ড মিল্ক), সয়া দুধ, বা ওট দুধ বেছে নিতে পারেন।

Post a Comment