গাছ আমাদের বন্ধু রচনা class 5,6,7,8,9,10

🌳 গাছ আমাদের বন্ধু

ভূমিকা

মানুষের জীবনে প্রকৃতির অবদান অপরিসীম। এই প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গাছ। গাছ শুধু পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে উপকার করে। প্রকৃত অর্থে গাছ আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নিঃস্বার্থ বন্ধু। তারা আমাদের কাছে কিছুই চায় না, কিন্তু আমৃত্যু আমাদের দিয়ে যায় অক্সিজেন, ছায়া, ফল, কাঠ ও আরও অনেক কিছু। তাই গাছকে বন্ধু হিসেবে গণ্য করাই আমাদের কর্তব্য।

গাছের পরিচিতি

গাছ হলো এমন একটি জীবন্ত সত্তা, যা শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল নিয়ে গঠিত। গাছের শিকড় মাটি থেকে পানি ও খনিজ উপাদান গ্রহণ করে এবং কাণ্ডের মাধ্যমে তা সমস্ত গাছে ছড়িয়ে দেয়। পাতার মাধ্যমে গাছ সালোকসংশ্লেষণ করে অক্সিজেন তৈরি করে, যা আমরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। গাছের এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া আমাদের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখে।


গাছের উপকারিতা

১. অক্সিজেন সরবরাহ

গাছ আমাদের জন্য অক্সিজেন তৈরি করে, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি গাছ দিনে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন নিঃসরণ করে, যা আমাদের জীবনের মূল চালিকাশক্তি।

২. কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ

গাছ বায়ুমণ্ডলে থাকা অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে সহায়তা করে। গাছের অনুপস্থিতি মানেই পৃথিবী হবে একটি উত্তপ্ত ও বসবাসের অযোগ্য স্থান।

৩. খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ

আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, কলা ইত্যাদি আমাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে, যা গাছ থেকেই আসে। শুধু ফলই নয়, অনেক গাছের পাতা, ফুল ও শিকড় ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়।

৪. কাঠ ও জ্বালানি

গাছ আমাদের দেয় কাঠ, যা দিয়ে আমরা ঘরবাড়ি বানাই, আসবাবপত্র তৈরি করি। এছাড়া অনেক অঞ্চলে কাঠ এখনো প্রধান জ্বালানি উপাদান।

৫. ছায়া ও শীতলতা

একটি বড় গাছ চারপাশের পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মের তীব্র রোদে গাছের ছায়া মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। শহরের তাপমাত্রা কমাতে গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

গাছ প্রকৃতির নান্দনিকতা বাড়ায়। সবুজ গাছপালা আমাদের মনকে শান্ত করে, মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ক্লান্তি দূর করে।

৭. পরিবেশ সুরক্ষা

বৃষ্টির সময় মাটি ক্ষয় রোধ করে গাছ। শিকড় দিয়ে তারা মাটি আঁকড়ে ধরে রাখে। ফলে ভূমিধস কম হয় এবং নদীভাঙন রোধে সহায়তা করে।

৮. বন্যা ও ঝড় থেকে রক্ষা

বড় বড় গাছ ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। উপকূলীয় এলাকায় কেওড়া বা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ গাছ ঝড়ের তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

গাছ আমাদের জীবনে ও সংস্কৃতিতে

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনযাত্রায় গাছ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির পাশে একাধিক ফলদ ও ভেষজ গাছ দেখা যায়। বট, অশ্বত্থ, কদম বা শিমুল গাছ আমাদের সংস্কৃতি, গান ও সাহিত্যের অংশ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ পর্যন্ত সবাই গাছ নিয়ে অসাধারণ সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে গাছের সংকট

আধুনিক নগরায়ন, বন উজাড়, শিল্পায়ন, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিনিয়ত গাছ কাটা হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। এই বন নিধন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। বায়ু দূষণ বাড়ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধি পাচ্ছে, বন্যা-খরা ও অতিবৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে।

গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গাছ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। নতুন গাছ লাগাতে হবে, পুরোনো গাছ রক্ষা করতে হবে। “একটি গাছ একটি প্রাণ” – এই নীতি মেনে চললে পরিবেশ আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।

করণীয়

১. বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে – বাসা, স্কুল, অফিস, রাস্তাঘাট, পার্ক – সর্বত্র।

২. বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নিতে হবে।

৩. শিশুদের ছোটবেলা থেকে গাছের গুরুত্ব শেখাতে হবে।

৪. যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে – কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে।

৫. সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

৬. ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছের সমন্বয়ে পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে।

উপসংহার

গাছ প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রকৃত বন্ধু – একেবারে নিঃস্বার্থ, নিরব, নির্জন সেবক। তাদের অবদান আমরা যতই বলি, কম হবে। আমাদের দায়িত্ব হলো, এই বন্ধুকে সুরক্ষা দেওয়া, তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করা। পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আজই গাছ লাগানো উচিত। “সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই” – এই শপথ নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Post a Comment