মা দিবসের কবিতা।মা নিয়ে কবিতা।মা নিয়ে সেরা কবিতা

মা — এই ছোট্ট শব্দটির ভেতরে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও মমতা। একজন মা শুধু সন্তান জন্ম দেন না, তিনি তাঁকে গড়ে তোলেন, শেখান ভালোবাসতে, স্বপ্ন দেখতে। তাঁর কোলই শিশুর প্রথম নিরাপদ আশ্রয়, তাঁর হাসিই সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিময় দৃশ্য।

মা কখনও শিক্ষক, কখনও বন্ধু, কখনও পথপ্রদর্শক। নিঃস্বার্থভাবে তিনি দিনরাত কাজ করেন সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য, বিনিময়ে কিছু চান না। তাঁর ভালোবাসা শর্তহীন, যার তুলনা কেবল মা নিজেই। সন্তানের একফোঁটা কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না, নিজের শত যন্ত্রণা গোপন করে হাসিমুখে থাকেন, যাতে সন্তান কষ্ট না পায়।

মায়ের ছায়া মানে প্রশান্তি, সাহস, আর আশ্রয়। তাঁর দোয়া সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তাই জীবনে যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, মাকে সময় দেওয়া, তাঁর যত্ন নেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। মা শুধু একটি সম্পর্ক নয়, একটি অনুভব, একটি অস্তিত্ব — যা হৃদয়ে চিরকাল জেগে থাকে। মা’র ভালোবাসা চিরন্তন, অবিনাশী।প্রিয় পাঠক মা দিবস উপলক্ষে আমরা হাজির হয়েছি সেরা কবিতা গুলো নিয়ে চলুন পড়া যাক।

মা
কাজী নজরুল ইসলাম

যেখানেতে দেখি যাহা
মায়ের মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের যতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।


হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।


কত করি উৎপাত
আব্দার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে র’ন নাহি খেয়ে,
শত দোষে দোষী তবু মা তো ত্যাজে না।


পল্লী জননী
জসীম উদ্দীন



রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর- ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম্ ঘুম্ যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।

আমাদের মা
হুমায়ুন আজাদ


আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক'রে উঠতে পারতো না
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয় নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড়ো ছিলো, কিন্তু ছিল আমাদের সমান,
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেণীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়ল বিলের প্রচণ্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া স'রে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু_দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;_সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়তো
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর - আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কি না আমরা জানি না
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধ'রে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমো খেলে মার ঠোঁট রকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোটো ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড়ো হ'তে থাকি
আমাদের মা বড়ো ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হ'তে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হ'তে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝ'রে ঝ'রে পড়ে না
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করি না
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমর করে।

মা
কাজী কাদের নেওয়াজ


মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভূবনে নাই।

মা
ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিম


মা কি করে বোঝাব তোমায় ভালবাসি
যত দূরে যাই,
ততই কেমন জানি একা লাগে।

এখানে বকা দেওয়ার কেউ নেই
আদর করার কেউ নেই মা
দম্ভ বন্ধ হয়ে যায় এই ইট-পাথরের শহরে।

মা! কি করে বলবো তোমায়
আমি ভাল নেই,
তোমার পরশ নেই
তোমার ছোঁয়া নেই
বাবা বলে কেউ ডাকে না।

মা কি বলবো তোমায়
কত তোমায় জ্বালিয়েছি- পুড়িয়েছি,
আজ কিসে আমার চোখে জল
কিসে তোমার জন্য মাতোয়ারা এ মন।

প্রতি ক্ষণে ক্ষণে মন করে আমার ক্রন্দন
মা কেন এমন হল,
বলে দাও আমায়
রাত যায় দিন যায় একবারোও দেখি না তোমায়।

মা যেতে চায় মন তোমার কাছে
শতবার তোমার কাছে যেতে চাই
কিন্তু সেই সময় কভু নাহি মোর আসে?

মা
ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিম


মার চোখে জল দেখলে ফাটে মোর বুক,
মা যে আমার ভালবাসা
মা যে আমার সুখ।
মা যে আমার চাওয়া-পাওয়া
মা যে আমার সব,
মাকে একটু খুশি করলে
খুশি হবে মোর রব।
মা যে আমার ধন-রত্ন
সব সুখের মূল,
আমাচ তার সন্তান হয়ে
কেমনে বুঝি তারে ভুল।
মা যে আমার দেহরক্ষী
সব কষ্টের -ভাগী,
আমি তার বুকে কষ্ট দিয়ে কেমনে
থাকি রাগি?

মা
কলমে জাকিয়া

ধরণীর মাঝে আনলে তুমি
তুমি দেখালে আলো,
তুমি শেখালে বুঝতে আমায়
যত খারাপ ভালো।

তোমায় দেখলে মাগো আমার
জুড়ায় দুই চোখ,
পাই তোমার মাঝে
আমার সব সুখ।

জানি, তুমিও ভালোবাসো আমায়,
তাইতো,কাছে টানো
হাজার বাহানায়।


যখন আমি তোমার সাথে
করি মাগো রাগ,
তখন তুমি কর আমায়
আদর- সোহাগ।

ভুলিয়ে দাও আমার
সব খারাপ লাগা,
তোমার মাঝে কি যাদু আছে
সেটাই জানে কেবা?

আমায় কাছে পেলে তুমি
হও অনেক খুশি,
তোমায় আমি ভালোবাসি,
সবার থেকে বেশি।

ইসলাম তোমায় দিলো মাগো
শ্রেষ্ঠ সম্মান,
তাইতো তুমি সবার সেরা
তুমিই মহান


মা
কলমে এস এ.বিথী রহমান

সবার সেরা যে জন আমার
সে জন আমার মা,
সকল মা সেরা যিনি
তিনিই আমার প্রান প্রিয় মা।

মা’র যখন পরশ পেয়ে ছিলাম
তখন ধন্য ছিলাম আমি,
হাজার দুঃখ কষ্ট পেলে
ভুলে যেতাম আমি
তোমার আঁচলের ছায়া পেলে।
কত দিন তোমায় পায়নি ভবে
দেখতে মা প্রিয় মুখ খানি।

মা তোমায় ভালোবাসি
তুমি আমার জীবনে সেরা,
এই ভুবনে হয়না মা গো
তোমার তুলনা।

 মা
-- দিলওয়ার


কোলে নিয়ে
দোল দিয়ে
বলেছিলো মা -
'চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।'

বলেছিলো সেই কবে
দুধে ধোয়া শৈশবে - না?
আ!

জানলাম মা-র কাছে
আমি এক রাজপুত
মানুষের দরবারে
জীবনের রাজদূত,
প্রকৃতি বলেছিলো - বাঃ !

তারপর ধীরে ধীরে ফুটলাম
অবলী আঁধার চিরে ফুটলাম
ঘুরন্ত গ্রহের সাথে ছুটলাম,

ছুটলাম দূর মহাশূন্যে
শৈশবে দেওয়া মা-র পূণ্যে,
চাঁদে গিয়ে রাখলাম পা
থরথর কাঁপে সারা গা
চাঁদের কপালে একী
বিশ্বের মা !!
আ!

'তোমার মা'
হাবীবুল্লাহ সিরাজী


তাঁর ছায়া তাঁরই মতো থাকে
উঠোন, বাগান, শান বাঁধানো ঘাটে
সন্ধ্যা যখন নামে
হাতের মুঠোয় কমলালেবু, কমলালেবুর ঘ্রাণে
দীর্ঘ চুলে গন্ধ-বাতাস খেলে
আমার তখন কী-ই বা এমন বয়স। রাত পোহালে
একটি কোয়া যত্ন ক'রে খাবো -
পাতে যখন পড়বে মাছের পেটি
নাকের ডগায় ঘামের বিন্দু মুছে
'জলদি বাবা, বেলা অনেক হলো !'

বেলা অনেক হলো। এখন তাঁর চোখে
কতোই বড় আমি -
চশমা খুলে আঁচলে কাচ ঘসে
'তোমার চুলেও পাক লেগেছে'
হাসির সঙ্গে মিলিয়ে ঠান্ডা ব্যথা
হাতের সুতো আলগা হ'য়ে আসে
ওড়া পাতায় সূ্র্য শেষের আলো
'তোমার ভুরু বাবাজানের মতো।'

'তোমার শখ, তোমার স্বাদ আর কে জানে বেশি, -'
অনেক দূরে এসে - মেঘে-মেঘে আকাশ নিচু হলে
পানের পাতা ফোঁটার ভারে কাঁপে,
মোহ এবং মায়ার টানে
শোক-দুঃখ এক জীবনে উঁচু-নিচু হ'লে
প্রতীক্ষা আর জ্যোৎস্না নিয়ে হাঁটে;
সংকটে আর নিঃসঙ্গতার ষোলো তলায় ব'সে
আমি কেবল চিঠির পাতা খুলে
ভারী চোখে পড়ি: 'তোমার মা' !


মা-র কাছে ফেরা
 রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ


ওখানে ভীষণ খরায় ফসলের চরাচরে পাখা মেলে বোসেছে এক
বন্ধ্যার বাজপাখি, তার ঠোঁটের বিষ আমার রক্তের শহরে ঢুকেছে
শত্রুসেনারা যেমন বিজয়গর্বে ঢোকে পরাধীন দেশের ভিতর।
মা, এই পরাধীন শরীরে কোথাও মুক্ত আকাশ নেই, মাঠ নেই -
রক্তে মাংসে খরার পতাকা উড়িয়ে রেখেছে ভিন্ন শাসক সেনারা।

কতদিন ঘুমোই না মা ! সেই কবে কৈশোরের প্রথম সকালে
সংসারের গন্ধে ভেজা তোর সোঁদা বুকে মুখ লুকিয়ে নির্ভাবনায়
ঘুমিয়ে যেতাম স্বপ্নের নিরাকার সমুদ্রের ঘোলা লোনা জলে
সেই কবে, কতদিন আগে - কিছুক্ষণ বুকে রাখ, বুকের শান্তিতে।
কতোদিন ঘুমোইনি, নিদ্রার মতো জেগে আছি নিদ্রিত চোখে
_____________ কতোদিন, সেই কতোদিন...

ওখানে অভাব, মারী, দীর্ঘশ্বাসে আগুনের বিপুল জলোচ্ছ্বাস,
দেবদারুর শীর্ণ পাতাগুলো ঝ'রে গেছে মাটির হৃদপিণ্ডে।

সারারাত পথের নির্জনতা সরিয়ে সরিয়ে মানুষের মৃত হাড়
কান্নার কঙ্কাল দেখে আমি আর কোনোদিন কবরের পাশে যাই নি
সড়কের জীবন্ত কবর এসে বুকের ভূমিতে জেগেছে
_____________ সম্মিলিত মৃত্যুর উৎসব।

জানালাগুলো এখোনো খুলিস নি মা?
কতোদিন আকাশ দেখিনি, অনায়াসে পাখা মেলে উড়ে যাওয়া
পাখিদের পালক ঝরে পড়া, রঙিন প্রজাপতি, নক্ষত্র, মেঘ
কতোদিন ঝড়ের পূর্বাভাসে সঞ্চিত কালো মেঘ দেখিনি।

এ-দুটো অনিদ্রায় পোড়া পাথর চোখে
তোর মাতৃত্বের চুমু দিয়ে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দে
কতোদিন ঘুমোই নি মা, কতোদিন ঘুমোই না...

মা
শান্তি সিংহ


'মা'-নামের মাঝে আছে অনন্ত বিস্তৃতি
ইড়া-পিঙ্গলায় জাগে অনাহত ধ্বনি,
চরাচরে ভালোবাসা মিহিন বাতাস
ঝিরিঝিরি সুরে বলে : মা, আমার মা !

সমস্ত প্রাণীর মাঝে মমতার টান
কোন আদিকাল থেকে ভবিষ্যের দিকে,
সমস্ত প্রলয়-বাধা দুঃখ-অনটন
সহজে উজিয়ে যায় 'মা' নামের গান !

আগে তো জননীবোধ, জায়াভাব পরে -
পুরুষের কাছে এই চিরসত্য কথা,
উচ্ছল যৌবন দিনে দ্বন্দ্ব-সমুচ্চয়
প্রেমিকার মাঝে তবু জেগে থাকে মা !

মা, আমার মা - এই অতিপ্রিয় কথা
অনাদ্যন্ত কাল ধরে মধুক্ষরা ধ্বনি,
নানা বিবর্তন মাঝে চিরকাল জুড়ে
শোক-তাপ নানা দুঃখে সন্তাপহরণী !

মা
-- সুমিত্রা দত্তচৌধুরী


তোমার দক্ষিণ হাত রাখো মাথার ওপরে
মা আমার বড় ভয় করে
এই পৃথিবীর এত বেশি আলো
আমার সর্বাঙ্গে আগুনের আঁচসম জ্বলে
আমার সত্য থেকে আমি প্রতিদিন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাই
আমার প্রেম থেকে আমি প্রতিনিয়তই সত্যভঙ্গ করি
আমার আত্মার প্রার্থিত মুখ ছাই ওড়া প্রান্তরে হারিয়ে যায়
সবুজ ফসলে জেগে থাকে নষ্ট কীটের গোপন ছবি

ঐ শীর্ণ আঙুল থেকে আজ শান্তি ঝরে থাকে
চিরকাল আমি যেন কারো সন্তান হয়ে থাকি,
তোমার দক্ষিণ হাত রাখ মাথার ওপরে
মা আমার বড় ভয় করে।।

মা
-- মল্লিকা সেনগুপ্ত


মা শুনলে ভেসে ওঠে সিঁদুরের টিপ
লাল পেড়ে শাড়ি, কোলে দুধের সন্তান
যামিনী রায়ের ছবি, সে তো তুমি নও !
কোথায় লুকিয়ে আছ অন্তরালে, রক্তমাংসময়ী?

মা হওয়া মুখের কথা নয়
হাসিমুখে টিপ সেজে যিনি ঠিক বেছে নেন
শিশুযোগ্য হরলিক্স, বেবি সফট পণ্য রাশি রাশি
সে তো শুধু বিজ্ঞাপন টিং টং স্বপ্নের বাজার !

শিশুর আঙুল ধরে মা চলেছে ইস্কুলে ইস্কুলে
মুখ ধোয়া, ছুঁচু করা, পেনসিল কেনা - মা চলেছে
বাবা শুধু মাঝে মাঝে নিয়ে যায় চিড়িয়াখানায়
প্রতিটি মায়ের মুখে খুঁজে দেখি জননী তোমাকে
'হাসিমুখে সব সয় সেই তো জননী'
হাজার বছর ধরে শুনে শুনে কান পচে গেল
কে বলেছে সব সইবার দায় শুধু মায়ের?
মাতৃত্ব মহান যদি কুকুরী মায়ের গায়ে ঢিল কে মেরেছে !
ডাস্টবিনে কার শিশু কুকুরীর স্নেহে বেঁচে ওঠে !

মায়ের গা থেকে যতো অতিকথা কবিতা কল্পনা
পলেস্তারা খুলে ফেলে দেখ, তার রক্তের উত্তাপ
তারও বুকে ধক্ ধক্ করে হৃদরোগ, প্রণয়ের ভাষা
মাতৃহত্যা মনে পড়ে ওরেস্টেস, পরশুরামের !
জঠরে দেবকী তুমি পালনে যশোধা হতে হবে
গার্ডিয়ানশিপ তবু এই রাষ্ট্র তোমাকে দিল না

মায়ের পেটের মধ্যে তিলে তিলে ন'মাস ন'দিন
হোমোসেপিয়েনগুলি বেড়ে উঠে ভুলে যায় তাকে

মাতৃ-হারা
রুহুল আমীন


মাগো তুমি আমায় ছেড়ে কোথায় গেলে চলে,
ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলে কিছু নাহি বলে।
আমায় ছেড়ে নিঠুর মাগো কেমন করে থাকো,
আমার কথা একটুও কি মনে পড়ে নাকো ?

সবাই বলে - গেছ তুমি মরন পারের দেশে,
সেথায় গেলে আবার কেহ ফিরে নাহি আসে।
কিসের মায়া সে দেশে মা, সে দেশটি কেমন?
মা বলে কি ডাকে কেহ আমি ডাকতাম যেমন !

কিসের টানে আমায় ছেড়ে সেথায় তুমি গেলে ?
দুষ্ট বলে আমায় কিগো গেছ তুমি ফেলে ?
মামার বাড়ী যেতে তুমি – আমি যেতাম সাথে,
কৈ বারণ তুমি একটুওত করনিকো তাতে !

বাবার সাথে থাকবো বলে যদি ধরতেম আড়ি,
বলতে তুমি “খোকন” ছাড়া থাকতে কিগো পারি?
স্কুল থেকে আসতে যদি একটু দেরী হতো ,
পথের পানে থাকতে চেয়ে ভাবতে বসে কত?

একটু যদি অসুখ হতো, একটু সর্দি কাশি,
সারা রাতি কাটিয়ে দিতে আমার পাশে বসি।
আমায় ভুলে থাকতে তুমি পাওনা বুঝি ব্যাথা ?
অনেক খোকন আমার মতন আছে বুঝি সেথা !

শত মায়েরে ফাকি দিয়ে যারা সে দেশে গেছে চলি,
তাদের তুমি কোলে তুলে নিলে নিজের খোকাকে ভুলি !
আমি কিন্ত ভুলিনি তোমারে একটি দিনেরও তরে,
তোমার ছবিটি সদাই আমার থেকে থেকে মনে পড়ে।

আকাশের ঐ নীল তারাটি সে বুঝি মা তুমি,
তাইতো রাতে চুপিসারে এসে আমারে যাও চুমি।
মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে তোমায় স্বপ্নে দেখি,
জাগিয়া দেখি তুমি নাই পাশে –সবই মিথ্যা ফাঁকি।

Post a Comment