আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা for class 4,5,6,7,8,9,10

আমার প্রিয় শিক্ষক

ভূমিকা

একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীর জীবনে পিতা-মাতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানই দেন না, জীবনের সত্য ও নৈতিকতার শিক্ষাও দেন। শিক্ষকের ছোঁয়ায় একজন সাধারণ ছাত্র হয়ে ওঠে জ্ঞানী, সচেতন এবং মানবিক মানুষ। প্রতিটি ছাত্রেরই কোনো না কোনো প্রিয় শিক্ষক থাকেন, যিনি তার মনে বিশেষ স্থান করে নেন। আমার জীবনেও তেমন একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন – তিনি হলেন মোঃ কামরুল হাসান স্যার।

পরিচয়

কামরুল হাসান স্যার আমাদের স্কুলের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। তিনি অত্যন্ত সৎ, কর্তব্যপরায়ণ ও আদর্শবান ব্যক্তি। তার জন্ম ঢাকার এক শিক্ষিত পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তার ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং পাঠদানের পদ্ধতি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখে দেখি।


স্যারের পাঠদানের পদ্ধতি

স্যার ক্লাসে ঢুকেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। তিনি কখনোই শুধু বইয়ের ভাষায় পড়ান না, বরং উদাহরণ, গল্প এবং চিত্র ব্যবহার করে বিষয়গুলো সহজ করে বোঝান। তার কণ্ঠস্বর দৃঢ় ও স্পষ্ট। তিনি আমাদের শুধু মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভরশীল হতে দেন না, বরং আমাদের ভাবতে, বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে শেখান। বাংলা সাহিত্যের কঠিন কবিতা বা গদ্যও তিনি এমনভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, তা মনের গভীরে গেঁথে যায়।

স্যারের চারিত্রিক গুণাবলি

আমার প্রিয় শিক্ষক একজন আদর্শ মানুষ। তিনি বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল। কোনো ছাত্র তার প্রশ্ন ভুল করলেও তিনি কখনো রাগ করেন না। বরং ধৈর্যের সঙ্গে ভুলটি বুঝিয়ে দেন। তিনি ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যার কথাও মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং উপযুক্ত পরামর্শ দেন। তার সততা, শৃঙ্খলা ও সময়নিষ্ঠতা আমাদের কাছে অনুকরণীয়।

আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক

স্যার আমাদের বন্ধু, অভিভাবক এবং পথপ্রদর্শক – তিন ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হন। আমরা কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে তিনি ক্লাস শেষে আলাদা করে সময় দেন। পড়াশোনার বাইরেও খেলাধুলা, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের উৎসাহিত করেন। আমরা যখন কোনো সাফল্য অর্জন করি, স্যার আমাদের থেকে বেশি খুশি হন। আবার কেউ ব্যর্থ হলে তিনি বলেন, “পুনরায় চেষ্টা করো, সাফল্য তোমার হবেই।”

অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রিয় শিক্ষক

স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। তার জীবনের সংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের গল্প আমাকে সাহস জোগায়। তিনি আমাদের শেখান—জীবনে বড় হতে হলে শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, চরিত্র, মেধা ও পরিশ্রম দরকার। তার উপদেশ আমার জীবনের দিশারী। আমি তার মতো একজন শিক্ষিত, বিনয়ী ও সদাচারী মানুষ হতে চাই।

স্যারের অবদান

স্যারের অবদান শুধু আমাদের পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ নয়। স্কুলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ায় দুর্বল ছিল, যারা এখন ভালো ফল করছে শুধুমাত্র স্যারের মনোযোগ ও উৎসাহের কারণে। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত সহায়তা করেন, নিজের বেতন থেকেও বই-খাতা কিনে দেন। স্কুলে একটি পাঠাগার গড়ে তুলতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্রদের মাঝে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

ছাত্রদের প্রতি স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি

স্যার সব ছাত্রকে সমান চোখে দেখেন। তিনি কখনো ধনী-গরিব, মেধাবী-অমেধাবী বা ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করেন না। তার দৃষ্টিতে প্রতিটি ছাত্রই সম্ভাবনাময়। এই বিশ্বাস আমাদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে।

জাতি গঠনে প্রিয় শিক্ষকের ভূমিকা

কামরুল হাসান স্যারের মতো একজন শিক্ষক শত শত ছাত্রকে আলোকিত করেছেন, তাদের জীবনের পথনির্দেশনা দিয়েছেন। এমন শিক্ষক জাতির জন্য সম্পদ। তিনি শুধু শিক্ষক নন, একজন সত্যিকারের আলোকবর্তিকা, যিনি অন্ধকারে আলোর দিশা দেখান।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন

আমি বড় হয়ে একজন শিক্ষক হতে চাই, ঠিক আমার প্রিয় শিক্ষকের মতো। আমি চাই, আমি যেন ছাত্রদের ভালোবাসতে পারি, তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি, তাদের মনে সাহস, শক্তি ও নৈতিকতা জাগাতে পারি। আমার শিক্ষকই আমাকে এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

উপসংহার

আমার প্রিয় শিক্ষক শুধু একজন মানুষ নন, একজন জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তার শিক্ষায় আমি গর্বিত। তিনি আমার জীবনে এক আলোকবর্তিকা, যার আলো আমাকে প্রতিনিয়ত পথ দেখায়। এমন শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে প্রয়োজন, যেন তারা শুধু পরীক্ষায় নয়, জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে। একজন প্রিয় শিক্ষক যেমন শিক্ষা দেন, তেমনি একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেন। কামরুল হাসান স্যারের মতো একজন শিক্ষক পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

Post a Comment