🔷 অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংজ্ঞা:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Interim Government) হল একটি অস্থায়ী সরকার যা একটি নির্বাচিত সরকার ভেঙে যাওয়ার পরে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এটি সাধারণত নিরপেক্ষ, স্বল্পকালীন এবং নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারব্যবস্থা।
🔷 অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য:
✅ অস্থায়ী প্রকৃতি: এটি স্থায়ী নয়; নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠিত হয়।
✅ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা: এটি দলনিরপেক্ষ বা নিরপেক্ষ সরকারের মতো কাজ করে যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।
✅ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তত্ত্বাবধান: এই সরকারের মূল কাজ হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা।
✅ সীমিত ক্ষমতা: তারা সাধারণত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয় না; শুধুমাত্র দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করে।
🔷 অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা কেন হয়?
- 🗳️ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে
- ⚖️ বিদায়ী সরকারের প্রভাব এড়াতে
- 🤝 রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে
- 👥 সকল দলের আস্থা অর্জনের জন্য
🔷 বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার:
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের পরে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সূচনা হয়, যা একধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
✅ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (১৯৯৬ - ২০১১):
বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়।
এই সরকার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত হতো এবং ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতো।
২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়।
🔄 বর্তমান পরিস্থিতিতে:
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশ্নটি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। বিরোধীদল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানিয়ে থাকে, যদিও সংবিধান অনুযায়ী এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই।
🔷 বিশ্বের অন্যান্য দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার:
- 🇮🇳 ভারতে নির্বাচনের সময় বিদায়ী সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করে, কিন্তু বড় সিদ্ধান্ত নেয় না।
- 🇵🇰 পাকিস্তানে নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়, যা নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করে।
- 🇮🇹 ইতালি ও 🇫🇷 ফ্রান্সে রাজনৈতিক জটিলতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের নজির রয়েছে।
🔷 সারসংক্ষেপ:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো একটি নিরপেক্ষ, স্বল্পমেয়াদি সরকার যা নির্বাচনের পূর্বে ও পরে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে। এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক ভারসাম্য ও জনগণের আস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যদিও এর গঠন, কাঠামো ও কার্যক্রম দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ওপর নির্ভর করে।