বাংলাদেশের সংবিধান সম্পূর্ণ pdf।মূল সংবিধান pdf download

বাংলাদেশের সংবিধান

বাংলাদেশের সংবিধান (The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh) হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। এটি দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো, শাসনব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার ও সরকারের তিনটি স্তরের (বিচার, নির্বাহী ও আইনসভা) ক্ষমতা ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করে। সংবিধান একটি জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

সংবিধানের প্রণয়ন ও ইতিহাস

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়। এ সংবিধান রচনা করেন একটি বিশেষ কমিটি, যার প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। এই সংবিধান বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রচিত সংবিধানগুলোর একটি। এটি প্রাথমিকভাবে চারটি মূলনীতি — জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা — এর উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।


সংবিধানের গঠন ও মূল বৈশিষ্ট্য

  • বাংলাদেশের সংবিধানে মোট ১১টি ভাগ, ১৫৩টি ধারা এবং বেশ কিছু তফসিল (Schedule) রয়েছে। সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
  • গণতান্ত্রিক পদ্ধতি: সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে।
  • একক সংসদীয় পদ্ধতি: সংসদই আইন প্রণয়নকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান। এটি একক কক্ষবিশিষ্ট (এককেন্দ্রিক), যার নাম জাতীয় সংসদ।
  • নাগরিক অধিকার: সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন — বাকস্বাধীনতা, ধর্মপালনের অধিকার, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত করে।
  • আইনের শাসন: সংবিধান আইনের শাসনের কথা ঘোষণা করে, অর্থাৎ সকল নাগরিক ও রাষ্ট্র নিজেও আইনের অধীন।
  • নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা: আদালত স্বাধীন এবং তারা সংবিধানের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে সর্বশেষ কর্তৃত্ব রাখে।

সংবিধানে সংশোধনী

১৯৭২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে (২০২৫ পর্যন্ত)। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো:

  • পঞ্চম সংশোধনী (১৯৭৯): সামরিক শাসনকালকে বৈধতা দেয়।
  • দ্বাদশ সংশোধনী (১৯৯১): রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
  • পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১): তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং মূল চার নীতির পুনঃস্থাপন করা হয়।

সংবিধানের গুরুত্ব

বাংলাদেশের সংবিধান শুধু একটি আইনি দলিল নয়, এটি দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এটি জনগণের অধিকার রক্ষা করে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্ধারণ করে এবং শাসনব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখে। সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের সংবিধান একটি জীবন্ত দলিল, যা সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন হতে পারে, তবে তার মূল চেতনা — গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার — অটুট থাকতে হবে। এ সংবিধানই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি, যা জাতিকে একটি সুশাসিত, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।


Post a Comment