১.ভাবসম্প্রসারণ:
“অর্থই অনর্থের মূল” — এই প্রবাদটি সমাজে অর্থের প্রভাব ও তার অপব্যবহার সম্পর্কে একটি গভীর সতর্কবার্তা বহন করে। এর সাধারণ অর্থ হলো, অর্থ যখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে পরিণত হয়, তখন তা নানাবিধ অনর্থ বা অকল্যাণের জন্ম দেয়।
অর্থ বা টাকা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান — তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে, জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে তুলতে অর্থের প্রয়োজন। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থান—সব ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু যখন মানুষ অর্থকে উপার্জনের বদলে পূজার বস্তু বানিয়ে ফেলে, তখনই সমস্যা শুরু হয়।
অতিরিক্ত লোভ, অসৎ পথে অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা, অন্যের ক্ষতি করে নিজের সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা — এই সবই অনর্থ বা অকল্যাণের সূচনা করে। অনেক সময় অর্থের জন্য ভাই ভাইয়ের শত্রু হয়ে যায়, পরিবারে ভাঙন ধরে, সমাজে হানাহানি শুরু হয়। অর্থের লোভে মানুষ হত্যা, চুরি, দুর্নীতি এমনকি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও করে ফেলে।
যারা জীবনের সবকিছু অর্থের পাল্লায় মাপে, তারা মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলে। ফলে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে এবং ন্যায়-নীতির পতন হয়। অর্থ তখন জীবন গঠনের বদলে জীবন ধ্বংসের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
তবে এই প্রবাদটি কোনোভাবেই অর্থের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে না। বরং এটি আমাদের সতর্ক করে দেয় — অর্থ উপার্জন হোক সৎ পথে, নীতিবদ্ধভাবে এবং সীমার মধ্যে। অর্থ যেন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য না হয়, বরং এটি হোক জীবনের সহায়ক উপাদান মাত্র।
উপসংহার:
অতএব, “অর্থই অনর্থের মূল” প্রবাদটি আমাদের শেখায় যে, অর্থের পেছনে অন্ধভাবে ছুটে গিয়ে নৈতিকতা বিসর্জন দিলে তা কেবল অনর্থই বয়ে আনবে। অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, অর্থ যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে। তাহলেই সমাজে শান্তি, স্থিতি ও মানবিকতা বজায় থাকবে।
২.
ভাবসম্প্রসারণ: অর্থই অনর্থের মূল
প্রবাদ: অর্থই অনর্থের মূল
অর্থ: অর্থ বা টাকা-সম্পদই অনেক অনর্থ বা অকল্যাণের কারণ।
প্রসঙ্গ: সমাজে ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের অন্ধ মোহ কত ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, এই প্রবাদটি সেই বিষয়ের উপর আলোকপাত করে।
ভাবসম্প্রসারণ:
“অর্থই অনর্থের মূল”—এটি একটি প্রচলিত বাংলা প্রবাদ, যা মানবজীবনে টাকার অতিরিক্ত লালসা এবং ধনের মোহ কীভাবে বিপদের কারণ হয়ে ওঠে, তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। মানবজীবনে মৌলিক চাহিদা পূরণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে অর্থ একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে যখন এই অর্থই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে, তখন তা জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং অনর্থের সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত অর্থের মোহে পড়ে মানুষ অসৎ পথ বেছে নেয়—দুর্নীতি করে, অন্যের অধিকার হরণ করে, মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে এমনকি কখনো কখনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সমাজে দেখা যায়, অনেক সময় ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক অবসাদ, পারিবারিক অশান্তি ও সামাজিক অবক্ষয়ের। কেউ কেউ অর্থ অর্জনের নেশায় এতটাই অন্ধ হয়ে পড়ে যে, ন্যায়-অন্যায় বিচারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন অর্থ মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অনর্থ বা অকল্যাণ ডেকে আনে।
অর্থের লোভে মানুষের মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যায়। তখন সে becomes selfish, insensitive, and unethical. কেউ কেউ হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা তৈরি করে অন্যের ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আবার অনেক ধনী ব্যক্তি অর্থবিত্তের অহংকারে গরিব মানুষদের তুচ্ছজ্ঞান করে, যা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, যখন অর্থ মানবিক মূল্যবোধকে ছাপিয়ে যায়, তখন সেটি ধ্বংসের দিকেই মানুষকে ঠেলে দেয়।
তবে এই প্রবাদটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি অর্থ নয়, অর্থলোভ কে দায়ী করে। অর্থ নিজে অনর্থের কারণ নয়; বরং মানুষের অতিকাঙ্ক্ষা, লোভ, অসৎ উপায় অবলম্বন ইত্যাদিই মূলত অনর্থ ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত অর্থ উপার্জন করা, তবে তা যেন ন্যায়ের পথে হয় এবং মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
সবশেষে বলা যায়, অর্থ মানবজীবনে যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি তা অতিরিক্ত হলে বা অপব্যবহার হলে অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতএব, আমাদের উচিত অর্থের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা—না অতিরিক্ত লোভ করা, না একে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা। অর্থ উপার্জন হোক ন্যায়পথে, আর তার ব্যবহার হোক মানবিক উদ্দেশ্যে—তবেই আমরা এই প্রবাদের নেতিবাচক অর্থকে ইতিবাচকে রূপ দিতে পারব।